আগাম সতর্ক প্রস্তুতি দরকার
- ১৬ মে ২০২২, ০০:০০
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দেশ ভারত হঠাৎ করে খাদ্যপণ্যের রফতানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। ইউক্রেন আগ্রাসনে সবচেয়ে বড় আঘাতটি এসেছে খাদ্যপণ্যে। নানা বাণিজ্যিক-আর্থিক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি যুদ্ধাবস্থার প্রতিকূলতায় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গমসহ খাদ্যশস্য আমদানি একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে গমের মূল্য বেড়েছে। বিকল্প বাজার হিসেবে ভারত থেকে গমের আমদানি এ সময়ে আড়াইগুণ বেড়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্যটির দাম টনপ্রতি আগের চেয়ে ১০০ ডলার বেড়েছে। ভারতের গম রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশ। কারণ, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমদানিকৃত প্রায় পুরো গমই ভারত থেকে আনতে হবে আমাদের।
বছরে দেশে গমের চাহিদা ৭৫ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয় ১১ লাখ টন। বাকি গম আমদানি করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৩ শতাংশ গম রাশিয়া ও ইউক্রেন, ১৮ শতাংশ কানাডা এবং বাকিটা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়। পরের অর্থবছর রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে ৪৫ শতাংশ, কানাডা থেকে ২৩ শতাংশ, ভারত থেকে ১৭ শতাংশ আমদানি করা হয়।
ভারত গমের অন্যতম উৎপাদক হলেও বিশ্ববাজারে রফতানিকারক হিসেবে আগমন দুই বছর আগে। যুদ্ধ শুরু হলে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন গম সংগ্রহের আমাদের প্রধান উৎস ভারত। এনবিআরের তথ্য মতে, গত দুই মাসের কিছু বেশি সময়ে দেশটি থেকে ছয় লাখ ৮৭ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছে। এই সময়ে মোট আমদানির ৬৩ শতাংশই আনা হয় ভারত থেকে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ডিজিএফটি গম রফতানি বন্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও দুটো ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে সেগুলোর বিপরীতে গম সরবরাহ করা হবে। অন্যটি, খাদ্য ঘাটতিতে থাকা রাষ্ট্রের অনুরোধে ভারত সরকার সায় দিলে সেই দেশে গম সরবরাহ করা যাবে। এ প্রসঙ্গে নিত্যপণ্য নিয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের বিপদে পড়ার নজির রয়েছে। ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে দেশে এর দাম ৩০০ টাকার মাইলফলক স্পর্শ করে। ওই সময় সরকারি পর্যায়ে দেনদরবার করেও ভারত থেকে পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি। অন্য কিছু নিত্যপণ্যের ব্যাপারেও ভারতের নীতি আমাদের জন্য সহায়ক ছিল না। সুতরাং ঘাটতিতে পড়ে আমরা যে ভারত থেকে প্রয়োজনীয় গম আমদানি করতে পারব সেই আশা ক্ষীণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছর ৭৫ লাখ টন গম আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সাড়ে ৫৫ লাখ টন গম দেশে এসেছে। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু ব্যাহত হবে এর সঠিক হিসাব জানা যাচ্ছে না। এটা নিশ্চিত, বাণিজ্যিকভাবে ভারত থেকে গম আমদানির সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই একথা বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে গম আমদানিতে ভারতনির্ভরতা আমাদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।
ভারতের গম রফতানি বন্ধের প্রথম ধাক্কা পড়তে যাচ্ছে এশিয়া ও আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোতে। ভারতের এমন সিদ্ধান্তের পরপরই গত শনিবার জি-৭ ভুক্ত শিল্পোন্নত দেশের কৃষিমন্ত্রীরা এর নিন্দা জানিয়েছেন। অন্যদিকে জার্মান কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, সবাই যদি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে; তাহলে সঙ্কট আরো গভীর হবে। জি-২০ দেশের সদস্য হিসেবে ভারতের প্রতি দায়িত্বপূর্ণ নীতি গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। এমতাবস্থায় আমাদের সতর্ক প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি। বিকল্প বাজার খোঁজা একান্ত প্রয়োজন। যদিও চলতি অর্থবছরে আমরা সঙ্কটে পড়ব না, তবে প্রকৃত কারণ ছাড়াই দাম বাড়ছে। আগামী দিনগুলোতে যাতে বিপদে পড়তে না হয়; সেজন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। ইতোমধ্যে দেশের বাজারে আটা বিক্রি হচ্ছে আগের বছরের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি দামে। ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৩ শতাংশ বেশি দামে। এভাবে দাম বেড়ে যাওয়া থেকে জনসাধারণকে বাঁচাতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা