আইনি পথে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনুন
- ১৫ মে ২০২২, ০০:০০
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে সংঘটিত বেশ কয়েকটি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির মধ্যে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করার ঘটনা বহুল আলোচিত। প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রয়েছে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচারেরও অভিযোগ। আলোচিত এই ব্যক্তিকে অর্থ আত্মসাৎ এবং পাচারে সহযোগিতা করে অনেকেই আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। মূলত এই অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারকাণ্ডে পি কে হালদারকে ঘিরে গড়ে ওঠে একটি অশুভ চক্র।
সর্বশেষ খবর হলো- হাজার কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করে দেশ থেকে চলে যাওয়া পি কে হালদার ভারতে গতকাল গ্রেফতার হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। গত শুক্রবার দেশটির পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পি কে হালদার ও তার সহযোগী সুকুমার মৃধাসহ নিকটাত্মীয়দের বিপুল সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে দেশটির অর্থ-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। পি কে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন সুকুমার। হালদারের সাথে যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সুকুমারকেও দুদকের দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
খবরে প্রকাশ, গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ৯টি স্থানে একসাথে অভিযান চালায় ভারতের অর্থ-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)। সংস্থাটি অভিযুক্ত পি কে হালদারের বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তার ২০-২২টি বাড়ি আছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। হালদার-মৃধা জুটি পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী। ইডির ধারণা, এই দু’জনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশে বাংলাদেশী ব্যাংক এনআরবি থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। একই সাথে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি পাওয়া গেছে পি কে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদারের। কলকাতা ছাড়াও দিল্লিø, মুম্বাইসহ বেশ কয়েকটি শহরে হালদার-মৃধা জুটির বিনিয়োগ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পি কে হালদারের পাচার করা অর্থ হুন্ডি বা স্থানীয় ভাষায় ‘হাওলা’র মাধ্যমে ভারতে ঢুকেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে একাধিক সম্পত্তির লেনদেন করেছিলেন হালদার-মৃধা। ভরতে ৫০ হাজার রুপির বেশি জমা করতে গেলে অর্থের উৎস জানানো বাধ্যতামূলক, সেখানে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কিনতে কিভাবে ব্যাংকে লেনদেন করা হলো, তা জানার চেষ্টা করছে ভারতীয় গোয়েন্দারা। পাশাপাশি, ব্যাংকটিতে নামে-বেনামে পি কে হালদারের কোনো অর্থ আছে কি না তাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্র মতে, অশোকনগরে একাধিক সম্পত্তি ক্রয় করেছে হালদার-মৃধা জুটি; যার একটিতে এতদিন একাই থাকতেন সুকুমার মৃধার মেয়েজামাতা সঞ্জীব হালদার। সঞ্জীব নিজেও বাংলাদেশী নাগরিক। তিনি যে বাড়িতে থাকতেন, সেটি মূলত পি কে হালদারের ভাই, এনআরবি কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত প্রীতিশ হালদারের। পরে সেটি সুকুমারের নামে হস্তান্তর করা হয়। পি কে হালদারের আরেক সহযোগী স্বপন মিত্রের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। তিনিও অর্থ পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত। তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক নথি পাওয়া গেছে। তাকেও আটক করেছে ইডি। পি কে হালদারের আত্মীয় প্রণব হালদারও চক্রটির আরেক সদস্য।
সাধারণত কোনো অশুভ চক্র অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনে প্রভাবশালী অনেকের মদদ নিয়ে থাকে। বিনিময়ে মদদদাতারাও আর্থিক সুবিধা লুটেন। পি কে হালদার চক্রের আর্থিক কেলেঙ্কারিতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। চক্রটি হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে দেশী-বিদেশী অনেকের সহযোগিতা নিয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানেও এমন তথ্য মিলছে। বাংলাদেশী হয়েও হালদার-মৃধা জুটির ভারতে প্রভাবের অন্যতম বড় কারণ ছিল স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং মন্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠতা। ফলে অপকর্ম করেও এতদিন তারা দেশের বাইরে বহাল তবিয়তে ছিলেন।
আমরা মনে করি, পি কে হালদার চক্রের ভারতে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে আমাদের সরকারের উচিত ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগ করে আইনি পথে নিজ দেশে এই অর্থ ফিরিয়ে আনা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশী সব নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা, ভারত বন্ধুপ্রতিম দেশ হওয়ায় বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতা করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা