এতদিনেও মিটেনি কেন?
- ১৫ মে ২০২২, ০০:০০
শুষ্ক মওসুমের প্রারম্ভেই সাতক্ষীরায় বিশেষত উপকূলে খাবার পানির মারাত্মক সঙ্কট পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ মৌসুমে ঝড়বৃষ্টির সময় এ সমস্যার সাময়িক উপশম হলেও এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। নয়া দিগন্তের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি এক রিপোর্টে জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বারবার এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে সেখানে নদনদীতে লোনা পানি ঢুকছে। এতে সুপেয় পানির উৎস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের লবণাক্ত পানির ফিল্টারসমূহ অকার্যকর হয়ে পড়ায় উপকূল এলাকায় ব্যাহত হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ। এ অবস্থায় প্রধানত পরিবারের মহিলাদের পানির জন্য ছুটতে হয় দূর-দূরান্তে। তদুপরি, অনেকে দূষিত ও জীবাণুযুক্ত পানি সেবন করে পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্য সমস্যার শিকার হচ্ছেন। এলাকার মানুষদের জোর দাবি, বিশেষ করে উপকূল অঞ্চলে খাবার পানির অভাব মেটাতে সরকারিভাবে বড় জলাধার কিংবা পানির প্ল্যান্ট থাকা উচিত। আজো কেন তা তৈরি করা হয়নি, এ প্রশ্ন সবার।
২০০৯ সালে ‘আইলা’ ঝড়ের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে লোনা পানি ঢুকেছিল উপকূলের বিভিন্ন লোকালয়ে। ফলে খাবার পানির স্থানীয় উৎস বিনষ্ট হয়। এরপর আমফ্ান ইয়াসসমেত নানান দুর্যোগে বারবার উপকূলে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। লোনার আগ্রাসনের ফলে সাতক্ষীরা জেলায় বিশেষত উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলাদ্বয়ে সুপেয় পানির তীব্র অভাব অনুভূত হয়। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকার মানুষ খাওয়ার জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করেন এবং পুকুরের পানি ফিল্টার (পিএসএফ) করতে থাকেন। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই ফিল্টারিংয়ের বেশির ভাগ ব্যবস্থাই অকেজো হয়ে পড়ে। এতে জনগণ সাংঘাতিক সমস্যার সম্মুখীন হন। এ অবস্থায় প্রত্যহ দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে তাদের হেঁটে হেঁটে বিশুদ্ধ পানির সন্ধান করতে হয়। অনেক সময়ে এক কলস পানি জোগাড়েই কয়েক ঘণ্টা সময় চলে যায়। অনেককে দীর্ঘ সময় পানি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কখনো বা এনজিওর সরবরাহকৃত পানিই একমাত্র ভরসা। তবুও সরকারি কোনো সুবিধা নেই নিরাপদ পানি জোগাড় করার।
আলোচ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় ভেটখালির একজন মহিলা জানান, তাদের প্রায় আট মাইল হেঁটে খাবার পানি আনতে হয়। মাত্র এক কলস খাবার পানির জন্য কাজ কামাই করে দিনভর লাইনে থাকতেও হচ্ছে। সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামের জনৈকা মহিলার কথা, মাটির পাত্রে বা বোতলে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে দু-তিন মাস চলতে হয়। বৃষ্টি না থাকলে পানির জন্য দূরে যেতে হচ্ছে। একজন গ্রামবাসী বলেছেন, ‘যেদিকে চোখ যায়; কেবল পানি আর পানি। কিন্তু এক ফোঁটা নেই খাবারের পানি।’
এ পরিস্থিতিতে উপকূলবাসী নরনারীকে বিপুল সময় ব্যয় করতে হয় সুপেয় পানির জন্য। এ জেলার শ্যামনগরের ইউএনও বলেন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পানির ট্যাংক দেয়া হচ্ছে জনগণকে। যেখানে ডিপ টিউবওয়েলেও লোনা পানি উঠছে, সে এলাকাগুলোতে পুকুরের মাধ্যমে খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে। সাতক্ষীরার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের বক্তব্য, ‘গভীর ও অগভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। পানির আয়রন ও আর্সেনিক দূর করা হচ্ছে। রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং প্ল্যান্ট স্থাপিত হচ্ছে। অচিরেই আশা করি, খাবার পানির সমস্যা সমাধান হবে।’ জেলা পরিষদের কথা হলো, ‘এলাকার শতকরা ৬৩ ভাগ মানুষ এখন বিশুদ্ধ পানি পায়।’ বাস্তবে এলাকায় বেশির ভাগ মানুষ তা পায় না। বরং সংস্কার না করায় সাড়ে ৬০০ পিএসএফের বেশির ভাগ অকেজো। এদিকে, এনজিওরা প্রত্যেক পরিবারে পানির ট্যাংক দিচ্ছে বৃষ্টি হলে পানি ধরে রাখার উদ্দেশ্যে।
এ দেশের সবার জন্য নিরাপদ পানি অবিলম্বে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সাতক্ষীরায় কেন এখনো উপকূলে তা হয়নি, এটা একটা বড় প্রশ্ন। সরকারের এদিকে মনোযোগ দেয়া আশু কর্তব্য।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা