ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া সরকার
- ১২ মে ২০২২, ০০:০০
শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ অব্যাহত প্রতিবাদ বিক্ষোভের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে হটাতে পেরেছে। গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। একটি পরিবারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের কবল থেকে মুক্তির পথে কিছুটা হলেও এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কাবাসী; কিন্তু এটি চূড়ান্ত বিজয় নয়। তারা এখন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগ দাবিতে সোচ্চার।
মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করেও রেহাই পাননি। জনরোষের মুখে রাজধানী থেকে পালিয়ে গেছেন। সেনাপ্রহরায় আশ্রয় নিয়েছেন সামরিক ঘাঁটিতে। এরই মধ্যে একজন এমপিসহ সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে সাতজন। সরকারসমর্থক পেটোয়া বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশকে পরোয়ানা ছাড়াই যে কাউকে গ্রেফতার ও বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্র গুলি করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ক্ষমতা ধরে রাখার এই মরিয়া চেষ্টা দেশটিকে আরো বড় নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে যেতে পারে।
ইতিহাসের সবচেয়ে শোচনীয় অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার দেশটির পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা এই মুহূর্তে স্পষ্ট নয়। কারণ রাজপথে নেমে আসা জনগণের পেছনে কোনো রাজনৈতিক শক্তির মদদ নেই। শ্রীলঙ্কার শাসকদলের এই পরিণতির কারণ রাজাপাকসে পরিবারের একক কর্তৃত্ববাদী শাসন। দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবারের বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল। তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় আসে; কিন্তু পরে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ভুলে যায়। অনেকটা রাজতন্ত্রের ধাঁচে এক পরিবারের কর্তৃত্ব ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজেদের খেয়ালখুশি চাপিয়ে দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের তথা জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনের ইতিহাস তৈরি করে। তারা ইচ্ছামতো এমন সব অবাস্তব ও খেয়ালি নীতি জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়, যা বিপর্যয় ডেকে এনেছে। কৃষি খাতে সার ও কীটনাশকমুক্ত অর্গানিক ফসল উৎপাদনের অবাস্তব নীতি কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। লুণ্ঠন, দুর্নীতি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসানোর চটকদার বুলি সামনে আনে শাসকরা। বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের চোখে ধুলা দেয়ার চেষ্টা করে। ঋণ করে বিশাল সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, হাইওয়ে বা মেগাসিটি বাস্তবায়ন এবং সুদৃশ্য ও সুরম্য স্থাপনা ইত্যাদি নির্মাণের ধকল সইতে পারেনি গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশটির অর্থনীতি। একটি সরকারে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ মোট পাঁচজন এবং সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজাপাকসে পরিবারের ৪০ সদস্যের নিয়োজিত থাকা বিশ্বরেকর্ড বলেই মনে হয়।
অর্থনৈতিক সঙ্কটে জর্জরিত দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণের মধ্য থেকে সরকারের পদত্যাগের দাবি আসছিল। বিদ্যুৎ, খাদ্য, গ্যাস, তেলসহ জরুরি পণ্যের তীব্র সঙ্কটের মধ্যে গত এপ্রিলের শুরুর দিকে শুরু হয় প্রবল গণবিক্ষোভ। মাত্র দুই কোটি মানুষের দেশে ১৫ শতাংশেরই দৈনিক উপার্জন দেড় ডলারের কম। অর্থনৈতিক চাপে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। এ জন্যই তারা রাস্তায় নেমে আসে। কোনো বিরোধী দল জনগণের পক্ষে রাজপথে নামেনি; বরং কেউ কেউ ক্ষমতাসীনদের সাথে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে। তবে জাতীয় সরকারের প্রস্তাবে শেষ পর্যন্ত কেউ সম্মত হয়নি।
বিক্ষোভের পর মন্ত্রীদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। একসময় প্রায় সব মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। জনরোষের কারণে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য সরকারপক্ষ ত্যাগ করেন। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগে বাধ্য হন। আমরা মনে করি, এটি সর্বতোভাবে পরিবারতন্ত্রের ফল। দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের যে নীতি তারা অনুসরণ করে সেটিই সঙ্কটের মূল কারণ। অভিজাত শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার নীতি তাদের জনবিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
জনগণ এখন রাজনীতি থেকে রাজাপাকসে পরিবারকে বর্জনের দাবি জানাচ্ছে; কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা স্পষ্ট নয়। পরিহাসের বিষয় হলো, সঙ্কট সমাধানের দায়িত্ব রাজনীতিকদেরই নিতে হবে। আমরা শ্রীলঙ্কার বন্ধুপ্রতিম জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি শুভ কামনা জানাই। রাজাপাকসে পরিবারের পরিণতি অনেক দেশের শাসকদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা