অভয়ারণ্যে বুঝি পাচারের মহোৎসব!
- ১১ মে ২০২২, ০০:০০
জাতীয় একটি দৈনিকের চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে সবার সামনেই চলছে মূল্যবান বৃক্ষসম্পদ পাচার করার মহোৎসব। মাঝে মাঝে প্রশাসনিক অভিযানে দৃশ্যত গাছ উদ্ধার এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেও গাছ পাচারের তাণ্ডব বন্ধ করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, পাচার রোধে তাদের অবস্থান ‘কঠোর’। বাস্তবে সবসময় এর প্রমাণ মেলে না।
রেমা-কালেঙ্গা শুষ্ক ও চিরহরিৎ অরণ্য। সুন্দরবনের পর এটাই আমাদের দেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনভূমি। এর আয়তন ১৭৯৫ দশমিক ৫৪ হেক্টর। এটা হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবস্থিত। এ বনে আছে নানা প্রজাতির প্রাণীর পাশাপাশি রয়েছে মেহগনি, সেগুন, অ্যাকাসিয়াসমেত নানা প্রকার গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান বৃক্ষ। তবে সর্বদা গাছ পাচার হচ্ছে বলে বনের পরিবেশগত ভারসাম্য হারানো ছাড়াও বনাঞ্চলটা বিরান হয়ে যাচ্ছে। এ দিকে আবাসন হারিয়ে এখানে বহু বন্যপ্রাণী বিলীয়মান। বনটিতে গিয়ে দেখা যায়, গাছ কেটে ট্রাকে বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোথাওবা সে গাছ কেটে লোড করা হচ্ছে যন্ত্রযানে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, তারা কাটায় জড়িত; পাচারে নয় এবং ‘সামান্য’ মজুরি পেয়ে তাদের গাছ কাটতে হয় বনে। বনের অভ্যন্তরে শত শত গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে। এর চার পাশে পড়ে আছে এসব গাছের ডালগুলো। অনেক জায়গায় খুব দাপটের সাথে গাছ কাটা হচ্ছে। বনদস্যুরা এসব করছে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েও এরা পালায় না; বরং ‘বীরের মতো’ গাছ কাটতে থাকে। এ দৃশ্যের ছবি তুললেও তারা কোনো পরোয়া করে না। এমনকি, সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার গরজ বোধ করে না। তাদের কেউ কেউ বলেছে, ‘সরকারের বন নয়, খাসজমির গাছ কাটা হচ্ছে।’ শ্রমিকরা জানান, রাতের আঁধারেই বড় গাছ কাটা হচ্ছে। গাছ নিধনের মহোৎসবকালে দামি গাছের দিকেই বনদস্যুদের মনোযোগ অধিক। এ বনে এসব গাছের অধিকাংশই নিধন করা হয়ে গেছে। বন বিভাগের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ ও অসৎ কর্মকর্তা এ অপকর্মে দুর্বৃত্তদের সহায়তা করছে। জানা যায়, দীর্ঘ তিন দশকের বেশি আগে থেকেই এ বনের বৃক্ষ নিধন অবাধে চলছে। অতীতে অর্ধসহস্র প্রজাতির গাছ ছিল এ বনে। এখন আর তা নেই। স্থানীয় প্রভাবশালীরা সিন্ডিকেট গড়ে বৃক্ষ নিধন করে চলেছে। তাদের নিজস্ব ‘বাহিনী’ রয়েছে।
আরো জানা গেছে, বনকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে নিয়ে প্রভাবশালীরা গাছ কাটার চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে। মামলার ভয় করে না তারা; এরা অনেকে জেল খেটেই এ অপরাধে জড়িত। অনেকে এখনো কারাগারে। কিন্তু বনে বৃক্ষনিধনের তাণ্ডব চলছেই। চক্রের প্রধান ব্যক্তি না থাকলে তাদের সাঙ্গোপাঙ্গরা সব কিছুর নিয়ন্তা সাজে। অভিযোগ রয়েছে, দিনদুপুরে এখানে গাছ কাটলেও প্রশাসন নিশ্চুপ। কখনোবা ছোট পাচারকারীর নামে মামলা হলেও বেশির ভাগ পাচারকারী আগের মতো বৃক্ষ পাচারকাজ চালায়। একজন শিক্ষক জানান, ‘দীর্ঘ দিন দেখছি, সকাল-বিকাল প্রকাশ্যে ট্রাকে-ট্রাক্টরে বনের গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে চললে প্রাকৃতিক ভারসাম্য থাকবে না। এটা ভবিষ্যতের প্রতি হুমকি।’ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘বনে এখন আর তেমন গাছ নেই। বাকিগুলোও কাটার কাজ চলছে। প্রশাসনকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’ বনের রেঞ্জ অফিসার বলেছেন, ‘অনেক অভিযানে দুর্বৃত্তদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তারা আছে জেলখানায়।’ তিনি দাবি করেন, ‘এই বনের গাছ পাচার করা হচ্ছে না। সর্বক্ষণ চার পাশে নিয়মিত টহল-পর্যবেক্ষণ করা হয়।’ বন বিভাগের একজন কর্তা বলেছেন, ‘‘গাছ পাচারের কথা ‘শুনেছি’; অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’ বনের খাসজমি থেকে গাছ কাটতে হলে জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগে। চুনারুঘাটের ইউএনও জানান, এ বিষয়ে তাদের কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি।
আমাদের প্রত্যাশা, অবিলম্বে বন্ধ হবে দেশের সব অরণ্য থেকে গাছ পাচারের তাণ্ডব। এ জন্য প্রশাসনকে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা