সমন্বিত চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োজন
- ০৮ মে ২০২২, ০০:০০
জরা বা বার্ধক্য জীবনের এক চরম সত্য। বার্ধক্য যখন আসে, তখন কিছু স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। শরীরের প্রায় সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেই জরা বাসা বাঁধে। দেশে বর্তমানে এমন দেড় কোটি প্রবীণ জনগোষ্ঠী রয়েছেন, যাদের বয়স ৬০ বা ষাটোর্ধ্ব। লক্ষণীয়, ষাট বছর বয়সের পর মানুষের শরীরে বিভিন্ন অসুস্থতা ধরা পড়ে। এটি শারীরিক ও মানসিক। শারীরিক দিক দিয়ে যেমন দুর্বলতা দেখা দেয়, রক্তশূন্যতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, কিডনির রোগ, আর্থ্রাইটিস ধরা পড়ে। তবে অল্প বয়সীদের যেভাবে চিকিৎসা করা হয়, বয়স্কদের সেভাবে চিকিৎসা করা যায় না। বয়সের কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষমতা কমে যায়; সেসব বিষয় মাথায় রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। কিন্তু দেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দিতে এখনো তাদের উপযোগী চিকিৎসাব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলতে পারিনি।
বাস্তবে দেশের বিপুলসংখ্যক প্রবীণের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বলতে গেলে এখনো বড়ই নাজুক। আসলে তাদের স্বাস্থ্যসেবা উপেক্ষিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ১৫ শতাংশ প্রবীণের চিকিৎসায় কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। কোনো স্পেশাল জেরিয়াট্রিক হাসপাতাল নেই। অথচ প্রবীণ নাগরিকদের চিকিৎসায় এখন থেকেই মনোযোগী না হলে আগামী দিনে আমাদের বিপদে পড়তে হবে। কারণ, ইউএনএফপিএ বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ দেশে সাড়ে চার কোটি লোক প্রবীণ হয়ে যাবে। প্রবীণ জনগোষ্ঠী বেড়ে যাওয়া মানে, রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।
একটি বিষয় বিশেষভাবে দেখা যায়, দেশে প্রবীণদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা হয় বয়সজনিত জটিলতা হিসেবে। আমাদের সমাজ-বাস্তবতায় এখনো মানসিক সমস্যা হালকাভাবে দেখা হয়ে থাকে। মানসিক সমস্যা প্রকট না হলে কেউ চিকিৎসকের কাছে আসতে চান না। বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো অবহেলিত। মানসিক সমস্যা থেকে প্রবীণরা নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ফলে প্রবীণদের এসব সমস্যা কখনো নিরাময় হওয়ার নয়, এমন একটি ধারণা সমাজে বদ্ধমূল রয়েছে। যে কারণে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করানো হয় না। অথচ উচিত, সমস্যাগুলো আমলে নিয়ে একটু যত্ন সহকারে প্রবীণদের কথা শোনা। তাতে অতি সহজে তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা যায়; স্বাস্থ্যগত সমস্যাটা কোথায়। এটি করা হলে প্রবীণদের ‘একাকিত্ব’ ঘোচাতে সহানুভূতি আর কাউন্সেলিং দেয়া সহজ হয়, তাহলে অনেকাংশে তাদের সমস্যার সমাধান হতে পারে। এ জন্য চাই পরিবারে প্রবীণদের প্রতি আরো যতœশীল হওয়া, তাদের আনন্দময় সময় উপহার দেয়া। ফলে প্রবীণদের স্বাস্থ্য আরো ভালো রাখা সম্ভব।
মনে রাখা আবশ্যক, অল্প বয়সীদের আবেগ বেশি; তারা তুচ্ছ ঘটনায় অনেক সময় আত্মহননের পথে বেছে নেয়; সঙ্গত কারণে আমরা তাদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল থাকি। কিন্তু পরিণত বয়সীদের, বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্বদের আত্মহননের ঘটনা আমাদের চিরচেনা সমাজের জন্য বড় সতর্ক সঙ্কেত।
প্রবীণদের সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে সমন্বিত পদক্ষেপের বিকল্প নেই। তাদের স্বাস্থ্যসেবায় এখনই বিনিয়োগ না করলে আমরা বড় ধরনের বিপদে পড়ব। এ থেকে উত্তরণে প্রবীণদের চিকিৎসাব্যবস্থায় সারা বিশ্বে কার্যকর জেরিয়াট্রিক স্বাস্থ্যসেবা গড়তে এখনই মনোযোগী হতে হবে। এর জন্য চাই স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। দেশেই জেরিয়াট্রিক মেডিসিনের জন্য ডিগ্রি, কোর্স, হাসপাতালে চিকিৎসাব্যবস্থা, দীর্ঘমেয়াদি সেবা, শেষ সময়ের সেবা- এসব চালু করা প্রয়োজন। প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবায় জেরিয়াট্রিক চিকিৎসার সুযোগ তৈরি এবং প্রতিটি উপজেলায় বয়স্ক মানুষের চিকিৎসায় সুব্যবস্থা রাখা এখন সময়ের দাবি। এ জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন প্রবীণদের চিকিৎসায় সমন্বিত বোর্ড গঠন করা। আর প্রবীণদের বিষয়ে সবাইকে শৈশব থেকেই সচেতন করতে প্রাথমিক-মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যবইয়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে যাতে সবাই প্রবীণ নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কে জানতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা