২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সারা দেশে বেঘোরে প্রাণহানি

বিচারহীনতা-সরকারি উদাসীনতা কারণ

-

দেশে অপঘাতে মৃত্যু সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য রোগশোক বা প্রাকৃতিক কোনো কারণ দেখা যায় না। মূলত আমাদের আর্থসামাজিক ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনায় অনেকে প্রাণ হারাচ্ছে। এবারের ঈদে চার দিনে সারা দেশে ২৭ জন খুন হয়েছে। অন্য দিকে সড়কে ঝরেছে ৬৫ জনের প্রাণ। বিপুল প্রাণহানির পরও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কোনো অনুশোচনা আছে বলে মনে হয় না। এতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও কোনো দায় অনুভব করে না। সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছেও রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল একটি নিয়তি বৈ অন্য কিছু নয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিবদমান পক্ষগুলোর ভাগবাটোয়ারার দ্বন্দ্বে তিন স্থানে সাতজনকে জীবন দিতে হয়েছে। ঈদের আগের দিন কুষ্টিয়ার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্যের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে চারজন নিহত হন। আহত হন আরো ৩০ জন। ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির জয়-পরাজয় নিয়ে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আহত হন পাঁচজন। অপর ঘটনায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শরিয়তপুর সদর উপজেলায় ৮০ বছরের বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সারা দেশে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন আধিপত্য নিরঙ্কুশ করতে এমন নিষ্ঠুরতায় মেতে উঠেছে। তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, কাউকে খুন করতেও দ্বিধা করছে না। এ ছাড়া খুনখারাবির ঘটনায় আরো ১৫ জেলায় ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
উল্লিøখিত ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণে দেখা যাবে, এর পেছনে বিশৃঙ্খল প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার গভীর প্রভাব রয়েছে। জমিজিরাত নিয়ে ও পারিবারিক বিরোধ কিংবা স্বার্থের দ্বন্দ্বের ফয়সালা করতে মানুষ নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে পড়ছে। নিজেদের মধ্যে সঞ্চার হওয়া শত্রুতা নিরসনে লাশ ফেলা সমাধান হিসেবে দেখছে। এ জন্য দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর নির্ভর করার ধৈর্য অনেকেই দেখাতে পারছে না। এটি আমাদের একটি জাতীয় বিপর্যয়। সবখানে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে যেন। কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না আদৌ ন্যায়বিচার মিলবে কি না। সবাই তাৎক্ষণিক সমাধানে ব্যস্ত হয়ে উঠছে। এ থেকে আমাদের বাঁচার কোনো পথ আপাতত অবশিষ্ট রয়েছে, তা দেখা যাচ্ছে না।
ঈদের ছুটিতে বেশুমার প্রাণহানির অন্য ঘটনাটি ঘটেছে সড়কে। এবার বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। একটি পত্রিকার হিসাবে, ৩১ জন অর্থাৎ ৪৮ শতাংশ প্রাণ হারিয়েছে মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী। এরা বেপরোয়া চালাতে গিয়ে নিজেরা যেমন দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে; অন্যদের দুর্ঘটনার কারণ হয়েছে। ২৯ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত সাত দিনে সড়ক দুর্ঘটনার যে সংখ্যা গণনা করা হয়েছে, এটি ব্যতিক্রম কিছু নয়। দেশে প্রতিদিন গড়ে ১০ জনের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। দেশীয় ও বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে বেশ কয়েক বছর ধরেই আমরা এ তথ্য দেখছি। বরং ঈদের মৌসুমে পত্রিকা যে হিসাব করেছে, সড়কে প্রাণহানির সংখ্যাটা আরো বেশি হওয়ার কথা। সাধারণত দুর্ঘটনা-পরবর্তী খবর সংবাদপত্রে খুব কমই ফলোআপ করা হয়। আহত যাত্রীদের অনেকে পরে মৃত্যুবরণ করে। এমনকি বহু যাত্রী দুর্ঘটনার পর পঙ্গু হয়ে যায়। তাদের হিসাবও সংবাদমাধ্যমে সেভাবে আসে না। প্রকৃতপক্ষে আমাদের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই সড়কে প্রাণহানির প্রধান কারণ। প্রচলিত আইন কেউ মানছে না। এ জন্য কর্তৃপক্ষীয় কঠোর নজরদারিও নেই।
এভাবে মানুষের প্রাণহানি পৃথিবীর অন্য কোনো সভ্য দেশে সম্ভব নয়। মূলত বিচার ও জবাবহীনতার যে সংস্কৃতি আমাদের ওপর চেপে বসেছে; তার কুফলেই আমাদের এমন নিয়তি। এ থেকে বাঁচতে বিচারব্যবস্থাকে ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। অন্য দিকে সরকারি প্রতিটি কর্তৃপক্ষের হতে হবে আইনের রক্ষক ও মানবতা রক্ষায় আন্তরিক। এমন স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন জাতীয় শুদ্ধাচার। এই শুদ্ধাচার শুরুর লক্ষণ এ দেশে এখনো দৃশ্যমান নয়। ফলে নৈরাজ্য ও বেঘোরে মানুষের মৃত্যুও মামুলি বিষয় হয়েই দাঁড়িয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সাইফুলের গায়েবানা জানাজা ও বিক্ষোভ ঋণ তিন মাস প‌রিশোধ না করলে খেলাপি ‘গণঅভ্যুত্থানের বড় স্টেকহোল্ডার ছিল শিবির’ দাবি ইবি সমন্বয়কের যুক্তরাষ্ট্রে পরকীয়া করছেন নায়ক নিরব, অভিযোগ স্ত্রীর আইনজীবী হত্যার বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে আজও উত্তাল চট্টগ্রাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাসনাত-সারজিসকে হত্যার চেষ্টা, ঢাবিতে বিক্ষোভের ডাক বিচারপতিকে ডিম ছুঁড়ে মারলেন আইনজীবীরা এবার প্রকাশ্যে এলেন বেরোবি শিবির সভাপতি রূপগঞ্জে সুতা কারখানায় আগুন নোয়াখালীতে পিলখানায় হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

সকল