২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দণ্ডিত আসামির বিদেশ সফর

আইনের সমান প্রয়োগ উপেক্ষিত

-

আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে তীব্র বৈষম্য লক্ষণীয়। ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত একটি অংশের জন্য আইন ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োগ হচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে মৃদু প্রয়োগ দেখা যায়। আর সাধারণ মানুষের বেলায় অনেক ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে কঠোরতা প্রদর্শন করা হয়। বিশেষ করে সরকার কাউকে ‘শত্রু’ জ্ঞান করলে আইন তাকে কোনো ধরনের রক্ষাকবচ দিতে পারে না। দণ্ডিত এক সংসদ সদস্যের সম্প্রতি বিদেশ সফর নিয়ে নতুন করে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
আওয়ামী লীগ নেতা ঢাকার একটি আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম গত শনিবার বিকেলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক যান। সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, বিদেশ সফরে যাওয়ার সময় তিনি অভিনব কৌশল অবলম্বন করেন। প্রথমে বাসা থেকে আজিমপুর গোরস্তানে যান। সেখান থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছান। সাথে পরিবারের কেউ ছিলেন না। গাড়িচালকও গন্তব্য জানতেন না। তিনি সচরাচর যে গাড়ি ব্যবহার করেন তাতে চড়েননি। চালকও অন্য জন। তিনি আদালত কর্তৃক দণ্ডিত ছিলেন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের জন্য তার ১০ বছরের সাজা বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। ১০ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তার আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশনা ছিল। তার আগে বিচারিক আদালতের রায়ে তার ১৩ বছরের জেল হয়েছিল। এক যুগ আগে সে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন তিনি। প্রচলিত আইন অনুযায়ী, একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দেশ ছাড়তে পারেন না। শুধু তাই নয়, বিচারকসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের আসামিদের যারা বিদেশ যেতে সাহায্য করেছে তারাও অপরাধ করেছে।
হাজী সেলিম বহুল অলোচিত একজন ব্যক্তি। আমাদের দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা তাকে জাতির সবচেয়ে সম্মানিত জায়গায় সংসদ সদস্য বানিয়েছে। বিপুল সম্মান পাওয়ার পর যদি তিনি তার বিতর্কিত ভূমিকা থেকে বেরিয়ে আসতে পারতেন তাহলে বলা যেত, শুধরেছেন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের জন্য সাজা হলেও তার বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের মতো নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। একের পর এক অন্যায় করে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে তিনি ঢাকায় বেপরোয়া চলেছেন। তার সন্তানদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ এসেছে। কেবল নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে রাস্তায় পেটানোর পর তার এক ছেলের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বাসাবাড়িতে অভিযান চালায়। ওই সময় তার বাসা থেকে অস্ত্রশস্ত্রসহ নানা ধরনের স্পর্শকাতর নিরাপত্তা সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। তখন এমন মনে হয়েছিলÑ পুরান ঢাকায় তার পরিবার একটি সমান্তরাল প্রশাসন পরিচালনা করে। তবে শেষ পর্যন্ত তার অভিযুক্ত সেই ছেলেও খালাস পেয়েছেন। জানা যাচ্ছে, অভিযান পরিচালনাকারী আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য এমনকি দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটও আর তার সেই পুত্রের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেননি। হাজী সেলিমদের উত্থানের পেছনে আমাদের প্রশাসনের অকার্যকারিতা স্পষ্ট দৃশ্যমান। এমন হাজী সেলিমের সংখ্যা সারা দেশে অনেক। কোন যাদু বলে তারা গুরুতর অভিযোগ মাথায় নিয়ে সাফসুতরো হয়ে যান; কেউ তা প্রকাশ্যে বলতে পারে না।
আমরা দেখেছি, আরো লঘু দণ্ড নিয়ে বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পাননি। দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বয়সের ভারে ন্যুব্জ হওয়ার পরও তার জন্য এই অনুমতি মেলেনি। সাম্প্রতিক সময়ে হাজী সেলিম গুরুতর অসুস্থ এমন খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। অথচ দেখা গেল, একই আইনের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী প্রয়োগ। একেবারে শীর্ষপর্যায়ে যদি প্রকাশ্যে এমন বৈষম্য চলে তাহলে সারা দেশের নাজুক অবস্থাটি সহজে অনুমেয়। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ইতোমধ্যে মন্তব্য করেছেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে যেতে সহযোগিতাকারীরা অপরাধ করেছে। এখন দেখার বিষয় অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়। প্রথমে দেখতে হবে দোষীদের শনাক্ত করতে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না তা-ও দেখার বিষয়। তবে এখন পর্যন্ত সরকার এ ব্যাপারে খোলাসা করে কিছু বলেনি। এমতাবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো লক্ষণ নেই বলেই মনে হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
আইনজীবী হত্যায় উত্তাল চট্টগ্রাম জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ড. ইউনূস বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিভক্ত না হতে মাহাথিরের আহ্বান ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর তিন মাস পার হলেই সব ঋণ খেলাপি মিয়ানমারের জেনারেল মিন অংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইলেন আইসিসির প্রসিকিউটর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন : ফখরুল আইনজীবীর হত্যাকারী ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক’ শুভ কান্তি দাস কে? এশিয়া ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড পেল অধিকার চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ

সকল