শর্ষের মধ্যে ভূত
- ৩০ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
ঈদে ঘরমুখো মানুষের পদ পদে বিড়ম্বনা পিছু ছাড়ছে না। বছর ঘুরে মানুষ একই সঙ্কটে ঘুরপাক খাচ্ছে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে ঢাকা থেকে প্রায় এক কোটি মানুষ রাজধানী ছাড়ে। ভাঙাচোরা রাস্তা, যানবাহনের নিয়ম-কানুন না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও চাঁদবাজিসহ বহু সমস্যা সামনে নিয়ে মানুষের ঈদযাত্রা শুরু হয়। প্রথমে বাস ট্রেন ও লঞ্চের টিকিট সংগ্রহ নিয়ে এক মহাযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। ঈদের বিশেষ দিনগুলোর নির্ধারিত টিকিট উন্মুক্ত করার সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়। এ যেন এক ভুতুড়ে কারবার! কেউ এর সমাধান খুঁজে পান না। কেউ একটি টিকিট সংগ্রহে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে কাউন্টারে ২৪ ঘণ্টা পার করে দেন। তার পরও টিকিট পেলে এক মহা আনন্দ ও বিজয়ের হাসি হাসেন সংগ্রহকারী। বাস্তবে এ শক্তি ক্ষয় ও চরম ভোগান্তির কোনো কারণ থাকার কথা নয়।
টিকিট কালোবাজারিতে এগিয়ে রেল। ঈদসহ বিশেষ পালা-পার্বণে রেলের একটি টিকিট পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির কাজকর্ম সব সময় চলে লুকোচুরিতে। সর্বশেষ খবর, রেলের লোকেরাও কোটার টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন না। ক্ষমতাসীন বিভিন্ন দল ও পক্ষের প্রভাব এতটাই বেড়েছে, তারা কোটার টিকিটও বাগিয়ে নিচ্ছেন। অবস্থা এমন যে, রেলের টিকিট পেতে মন্ত্রী পর্যন্ত তদবির যাচ্ছে। আরো ভয়াবহ খবর হলো-যে সংস্থা টিকিটের ইজারা নিয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের লোকজনই কালোবাজারি করছেন। সংগ্রহকারীরা যাতে সহজে টিকিট পান; সেজন্য চুক্তি করা হয় বেসরকারি সংস্থা ‘সহজ’-এর সাথে। চুক্তির লক্ষ্য হলো জালিয়াতি প্রতিরোধ করে অনলাইনে সাধারণ মানুষের কাছে টিকিট বিক্রি করা হবে। দেখা গেল সেখানেই বসে আছে প্রতারক চক্র।
টিকিট কালোবাজারির জন্য র্যাব সহজের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিমসহ তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে। খবরে জানা যাচ্ছে, অনলাইন টিকিট বিক্রির সার্ভারে প্রবেশের সুযোগ ছিল রেজাউলের। তিনি প্রতি ঈদে দুই থেকে তিন হাজার টিকিট সরিয়ে নিতেন। এ টিকিট ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করতেন। আরো কত প্রতারক শুধু রেলের টিকিট নিয়ে কালোবাজারি করছেন জানা নেই। দেশে দুর্নীতিকে আগাম প্রতিরোধের কোনো চেষ্টা দেখা যায় না। একই অন্যায় দীর্ঘদিন চলার পর কোনো কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। যেমন র্যাব রেজাউলকে ধরার পর অন্যায় প্রতিরোধে নিজেদের সফলতা তুলে ধরছে। বাস্তবতা হচ্ছে গত ছয় বছর ধরে এই জালিয়াতি করে আসছেন রেজাউল। শুরুতে তাকে আটকানো গেলে এ কালোবাজারি করার সুযোগ পেতেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে দীর্ঘদিন কিভাবে এ দুর্নীতি চলল তার উত্তর নেই। আবার রেল কিভাবে এমন একটি সংস্থার সাথে চুক্তি করে যার কর্মকর্তারা চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করে বরং এক কর্মকর্তার মাধ্যমে জালিয়াতি করার সুযোগ পায়।
টিকিট নিয়ে রেলের ভেতরে দুর্নীতির বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। ঈদযাত্রায় ১০ শতাংশ টিকিট সংরক্ষিত ছিল ‘ভিআইপি’ ও রেলকর্মীদের জন্য। আরো ১০ শতাংশ সাধারণ কোটার জন্য রাখা হয়েছিল। বর্তমান রেল প্রশাসন বিপুল কোটা বাতিল করে রেলকর্মীদের জন্য ২ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখে। কোটার ভারে আক্রান্ত এ দেশে এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে হয়। দুর্ভাগ্য হলো এর কোনো সুফল সাধারণ যাত্রীদের কাজে এলো না।
টিকিট কালোবাজারি সংক্রমিত হয়েছে বেসরকারি বাস ও লঞ্চেও। বিশেষ কোনো উপলক্ষ হলেই দেখা যায় কাউন্টারে সাধারণ নিয়মে টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে, চলছে টিকিটের জন্য হাহাকার। তবে টিকিট পাওয়া যায় আড়ালে আবডালে। তখন মানুষকে অসহায় করে কয়েকগুণ বেশি দাম আদায় করে চোরাকারবারিরা। এসব আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যে সর্বগ্রাসী অনিয়ম দুর্নীতিতে নিমজ্জিত; এটি তার বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের অনিয়ম থেকে বিচ্ছিন্নভাবে মানুষকে রক্ষার চিন্তা করা বৃথা। প্রয়োজন জাতীয় ক্ষেত্রে একটি শুদ্ধাচারের সংগ্রাম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা