মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্ত
- ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে দেশে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। যদিও মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিগত ১২ বছরে একেবারে সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। বর্তমান সরকার ক্রমান্বয়ে এ বিষয়ে বজ্রআঁটুনি আরো কঠিনতর করেছে। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রতি সরকারি নীতি অনেক ক্ষেত্রে আইন কানুনের ধার ধারছে না। প্রথম দিকে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে যখন এ নীতির প্রয়োগ হয়; সুশীলসমাজ খুব একটা নাক-কান নাড়েনি। সরকারের এমন নীতির প্রতি তাদের নীরব সমর্থন ছিল বলা যায়। কিন্তু সরকার যখন এর আওতা বাড়িয়ে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বিস্তৃত করে, তখন প্রয়োজন পড়ল ডিজিটাল আইন প্রণয়নের। কেবল তখনই সুশীলসমাজ এর সমালোচনা করতে শুরু করে। এ নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল আইনের প্রয়োগের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এর মাধ্যমে মূলত সরকার মানুষের মুখ বন্ধ করার পথ খুঁজছে।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে বিগত ২৬ মাসে এ আইনের প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করেছে। এই সময়ের মধ্যে ৮৯০টি মামলা হয়েছে, তাতে অভিযোগ আনা হয়েছে দুই হাজার ২৪৪ জনের বিরুদ্ধে। আটক হয়েছেন ৮৪২ জন। গড়ে প্রতি মাসে অভিযোগ আনা হয় ৮৬ জনের নামে। মামলার সংখ্যা ৩৪ এবং আটক হয়েছেন ৩২ জন করে। যতই দিন যাচ্ছে, এ আইনের প্রয়োগ বাড়ছে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, গড়ে প্রতি মাসে অভিযোগ আনা হয়েছে ১৪৭ জনের নামে। আটক হয়েছেন ৬৭ জন করে। মামলা, অভিযোগ গঠন ও আসামির বৈশিষ্ট্য থেকে লক্ষণীয় এর মূল টার্গেট বিরোধী রাজনীতিক ও সাংবাদিকরা। সবচেয়ে বেশি ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে মামলার আসামি ও আটকরা হলেন রাজনীতিকরা। এর পরই রয়েছেন সাংবাদিকরা- ১৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
আইনটি ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো- সরকারি দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা বন্ধ করা। যারাই সামাজিক মাধ্যমে কোনো নেতার কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছু বলছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি ও দমন করা হচ্ছে। সাধারণত ক্ষমতাসীন দলের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হয়ে নেতাকর্মীরা এ আইনে মামলা করছেন। গত শনিবার সিজিএস ‘অন্তহীন দুঃস্বপ্ন-বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮’ শিরোনামে এক ওয়েবিনারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনায় আইনজীবী তানিয়া আমীরের ‘অবমাননা’ বিষয়ক মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘অন্যায় করলে যদি ভাবমর্যাদা ক্ষুণ না হয়, তাহলে সে অন্যায়ের কথা লিখলে বা বললে কেন ভাবমর্যাদা ক্ষুণ হবে।’ বাস্তবে ক্ষমতাসীনরা অবলীলায় অন্যায় অপকর্ম করছেন সারা দেশে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো তাগিদ বর্তমান বিচার-ব্যবস্থায় দেখা যায় না। এ অবস্থায় বিরোধী রাজনীতিক, সাংবাদিক কিংবা সাধারণ মানুষের পক্ষে কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে কিছু বললে বা লিখলে সেটা দোষের হয়ে যাচ্ছে।
শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মতপ্রকাশের জন্য এ আইনে ৪০০টি মামলা হয়েছে। সবার জানা, ফেসবুক মতপ্রকাশে খুবই জনপ্রিয়। এই প্লাটফর্মে মানুষ নিজস্ব বক্তব্য প্রকাশ করে ক্ষোভ দুঃখ প্রশমিত করেন। সামান্য এ সুযোগটুকুও ক্ষমতাসীনরা নাগরিকদের দিতে চান না। যদিও হক কথা বলার অধিকার সবার রয়েছে। সেটা যে কেউ প্রকাশ্যে প্রকাশ করতে পারেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল বৈশিষ্ট্য হলো- অন্যের ক্ষতি না করে স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করা। গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য এ ধরনের আইন প্রণয়ন থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল সরকারের। ইতোমধ্যে এ আইনে অন্যায়ভাবে যাদের হয়রানি করা হয়েছে; তাদের প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। আমরা মনে করি, আইনটি অপ্রয়োজনীয়। জনস্বার্থে এটি বাতিল করে সবাইকে স্বস্তি দিক সরকার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা