ব্যবহারে সচেতন হই
- ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
প্লাস্টিকপণ্য যে পরিবেশ ও মানবদেহের ক্ষতিকর তা এখন আর কারো অজানা নয়। এসব পণ্য প্রকৃতিতে দীর্ঘদিন টিকে থাকায় পরিবেশের ক্ষতি করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মুদিদোকান থেকে কেনা পণ্য বহন করতে যেসব ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো প্রকৃতিতে মিশে যেতে ২০ বছর সময় লাগে। চা, কফি, জুস কিংবা কোমল পানীয়ের জন্য যেসব প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। আর প্লাস্টিক বোতল শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও পচে না। এদিকে প্লাস্টিক কণা মাছের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে নানা ধরনের জটিল রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটাচ্ছে। দেশীয় এক গবেষণা মতে, আমাদের দেশের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়ের স্বাদু পানিতে পাওয়া যায় এমন ৭৩ শতাংশ মাছে রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক। এক পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৫ বছরে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ৭৫ গুণ বেড়েছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এখন শিশুরাও ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষায় জানা যায়, বাংলাদেশে ২০০৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্লাস্টিকের ব্যবহার তিনগুণ বেড়েছে। ২০২০ সালে ৯ লাখ ৭৭ হাজার টন প্লাস্টিকের ব্যবহার হলেও এর মধ্যে মাত্র ৩১ শতাংশ পুনর্ব্যবহার হয়েছে। বাকিগুলো ভাগাড়, নদী, খাল, নর্দমা ও যত্রতত্র ফেলা হয়েছে। ২০২০ সালে কৃষি, ইলেকট্রনিকস, পরিবহন, আসবাব, ভবন নির্মাণ, গৃহস্থালি, চিকিৎসা, টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন খাতে ১৪ লাখ ৯ হাজার টন প্লাস্টিকের ব্যবহার হয়েছে। আর রাজধানী শহর ঢাকায় দৈনিক ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে। দেশে ‘প্লাস্টিক দুর্যোগ’ ক্রমে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। গত ১৫ বছরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে। তবে এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো কাজ হয়নি। আবার পুনঃব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকও পরিবেশে থেকে যাচ্ছে। প্লাস্টিক পরিবেশ থেকে কখনো হারিয়ে যায় না। একসময় খাদ্যের সাথে মিশে যায়। তাই প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তা না হলে আমরা ভয়াবহ পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যগত হুমকিতে পড়ব।
যদিও ২০০২ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছিল। আর দেশের উপকূলীয় এলাকার হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁয় একবার ব্যবহারের পর বর্জ্য হয়ে যায় এমন প্লাস্টিক-সামগ্রীর ব্যবহার বন্ধের নির্দেশনাও দেয়া আছে হাইকোর্টের। তবে ওই নির্দেশনার কোনো বাস্তবায়ন নেই। প্রতি বছর ৯ লাখ টন প্লাস্টিক সাগরে যাচ্ছে।
অনেক দেশ পরিবেশ ও মানবদেহে ক্ষতিকর প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ হাঁটছে উল্টো পথে। প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার দ্রুত বাড়তে থাকলেও প্রশমনের উদ্যোগ নেই। ফলে দেশের মাটি, পানি, বায়ুসহ প্রকৃতিতে প্লাস্টিক দূষণ পেয়েছে নতুন মাত্রা। এতে বিপর্যস্ত প্রাণিকুলও। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট প্লাস্টিকের মাত্র ৩৬ শতাংশ বর্জ্য পুনর্ব্যবহার হচ্ছে। আর প্লাস্টিক বোতল রিসাইকেল হয় ৭০ শতাংশ। লক্ষণীয়, প্লাস্টিকের ব্যবহার বহুগুণ বাড়লেও বাড়ছে না সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
স্মরণ করা যেতে পারে, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করার সময় অব্যবস্থাপনায় প্লাস্টিকের প্রচুর কণা মাটি, পানি, পরিবেশ ও খাদ্যের সাথে মিশে যায়। আসলে প্লাস্টিকের রিসাইকেলও কোনো সমাধান নয়। ঘুরেফিরে পরিবেশে থেকে যায় এটি। তাই ধীরে ধীরে প্লাস্টিকের ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। সে জন্য পরিবেশবান্ধব কাগজ, পাটজাত কিংবা কাপড়ের পণ্য ব্যবহার করতে হবে। আর প্লাস্টিক বোতলের পরিবর্তে ব্যবহার বাড়াতে হবে মাটির বা কাচের বোতল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা