এ হতাশার অবসান কবে হবে
- ২২ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের প্রাণের মূল্য সবচেয়ে সস্তা। যার দলীয় পরিচয় নেই কিংবা ক্ষমতাবানদের সাথে যার সম্পর্ক নেই তাদের জন্য যেন বিচারও নেই। বিগত এক যুগে বিচার পাওয়ার অধিকারের এ অবনতি জাতীয় হতাশায় পরিণত হয়েছে। ঢাকা কলেজ বনাম স্থানীয় মার্কেটের দোকান মালিক কর্মচারীদের সংঘর্ষে প্রাণ হারানো নাহিদ হোসেনের পরিবার সর্বশেষ একই ধরনের হতাশা ব্যক্ত করেছে। এ দেশে রাস্তায় প্রাণ হারানো একেবারে নৈমিত্তিক একটি ঘটনা। মানুষের মনে রয়েছে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, অন্য দিকে ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত একদল লোকের রয়েছে আইন না মানার প্রবণতা। এ দুটো কারণে রাস্তায় সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। বিচার না পাওয়ার সংস্কৃতি থেকে সৃষ্ট হতাশা আমাদের সমাজে গভীরে ক্ষত তৈরি করেছে। অন্য দিকে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে রয়েছে চরম উদসীনতা।
নাহিদ নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। অভাবের কারণে তাকে পড়াশোনা বাদ দিয়ে উপার্জনের পথে হাঁটতে হয়েছে। ডেলিভারিম্যানের চাকরি করে প্রাপ্ত সামান্য বেতন দিয়ে নিজের স্ত্রী ও বাবার সংসারে তিনি অবদান রাখছিলেন। নিউমার্কেটে নামধারী ছাত্র বনাম দোকানিদের সংঘর্ষে তিনি কোনো পক্ষের নন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তার লাশের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, তার ওপর নির্মমভাবে আঘাত করা হয়েছিল। তার মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত কোথাও একটু সামান্য অংশ পাওয়া যায়নি যেখানে তাকে পেটানো হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, কারা এই পৈশাচিকতা করল, কেনইবা করল? মানুষের মধ্যে রয়েছে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। যখন তা প্রকাশ পাওয়ার সুযোগ পায় তখন এমনটা ঘটতে পারে। ২০ বছর বয়সী নাহিদকে নির্দয়ভাবে পেটানোর কারণ হতে পারে তাকে প্রতিপক্ষ ঢাকা কলেজের ছাত্র মনে করা।
ঢাকা কলেজ থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে বিপণিবিতান। পুরো এলাকাজুড়ে দুই ধরনের ব্যবসা। একটা হচ্ছে ফুটপাথ, অন্যটি মার্কেট। জানা যায়, উভয় জায়গা থেকে বিপুল চাঁদাবাণিজ্য করা হয়। এর বাইরে রয়েছে ছাত্রদের ‘মাস্তানি সংস্কৃতি’। পণ্য কিনে বা খাবার খেয়ে দাম পরিশোধ না করা বা আংশিক পরিশোধ করা কিংবা বাকির খাতায় রাখার একটা প্রবণতা রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এ ‘সংস্কৃতি’ চালু রয়েছে। পুরো এলাকার দোকান মালিক ও খুদে ব্যবসায়ীরা এ অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এই ক্ষুব্ধ গোষ্ঠী ঢাকা কলেজের ছাত্র ভেবে নাহিদের ওপর চড়াও হতে পারে। অপর দিকে ঢাকা কলেজে যারা চাঁদাবাণিজ্য করছে তাদের বর্বরতা আরো জঘন্য। এদের মধ্যে কিছু রয়েছে এমন বেপরোয়া, তাদের কাছে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই। এই মনোবৃত্তি তাদের আত্মস্থ হয়ে গেছে।
এমন বর্বরতার শিকার হয়েও নাহিদের মা বলছেন, তিনি বিচার চান না। তার বক্তব্যে চরম অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। তার মতে, এ বিচার আদায় করার ক্ষমতা তাদের নেই। আমরা দেখেছি কিছু দিন আগে মতিঝিলে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে হত্যা করতে গিয়ে খুনিরা একই ধরনের আরেকটা হত্যাকাণ্ড ঘটায়। সেখানে তাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে প্রাণ হারায় বদরুন্নেসা কলেজের এক ছাত্রী। তার পরিবারও নিম্নবিত্তের। তার পরিবারের পক্ষ থেকে ঠিক একই ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। তারা তাদের সন্তানের খুুনিদের বিচার চান না। দেশে এ ধরনের হতাশাজনক পরিস্থিতি এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। জনসাধারণ লক্ষ করেছে, এ দেশে কিভাবে সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তারা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিকার পায়নি। ব্যতিক্রম ঘটেছে শুধু ক্ষমতার মালিকদের ক্ষেত্রে।
নিউমার্কেটের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। এমনটি হওয়া এ দেশে একেবারে স্বাভাবিক। এ পরিস্থিতির পবির্তন ঘটাতে হলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নীতিগত পরিবর্তন দরকার। ছাত্রদের ব্যবহার করে চাঁদাবাজির যে সংস্কৃতি তা বন্ধ করতে হবে। ছাত্রদের মধ্যে মাস্তানির প্রবণতাও বন্ধ করতে হবে। আর পরিবারের সদস্যদের বিচারকেন্দ্রিক হতাশা দূর করতে হলে নতুন নজির স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে। সরকার যদি দলীয় চিন্তার বাইরে গিয়ে এগিয়ে এসে নাহিদের মতো যারা খুন হয়েছে তাদের খুনিদের বিচার করে দিতে পারে তাহলে এই হতাশার অপনোদন হবে। তাহলে হত্যার ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটলেও তার বিচার পাওয়ার আশা পোষণ করার সংস্কৃতি ফিরতে পারে। দেশে ফিরে আসতে পারে একটি মানবিক পরিবেশ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা