কঠোরভাবে দমাতে হবে
- ২২ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০, আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২২, ২০:৫৭
বাংলাদেশে পর্যটনের মতো বিরাট অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় খাতে যা আয় হওয়ার কথা দেশের, তা হচ্ছে না। এর মধ্যে পর্যটন আয়ের কেন্দ্রবিন্দুতুল্য, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের অধিকারী কক্সবাজারে ক্রমবর্ধমান অপরাধ ও সন্ত্রাস সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। একটি সহযোগী দৈনিক এ জন্য স্থানীয় কিশোর গ্যাং অন্যতম প্রধান দায়ী বলে উল্লেখ করেছে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে বিশেষত ক্ষমতার রাজনীতির প্রশ্রয় ও ভূমিকা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর ব্যর্থতা।
পত্রিকাটির কক্সবাজার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কক্সবাজারে পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। প্রতিনিয়ত একের পর এক খুন, ধর্ষণ, মাদক কারবার, ছিনতাই, কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা প্রভৃতি বেড়ে চলেছে। শহর ও শহরতলিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যা, জবরদখল, হত্যাচেষ্টা, এমনকি নারীকে আদালত চত্বর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ প্রভৃতির ফলে আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয় সর্বত্র এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ বর্তমানে নিরাপত্তাহীন। সোস্যাল মিডিয়াতে পর্যটনের নিরাপত্তা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ দেশের ভ্রমণপিপাসুরা। তোপের মুখে পড়েছে পুলিশও। বিশেষত গত দু’সপ্তাহের পরিস্থিতি সেখানকার ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। অনেকের প্রশ্ন : সামান্য বিষয়েও এত নিষ্ঠুর হওয়া কী করে সম্ভব হচ্ছে? উল্লেখ্য, মাত্র ১২ দিনে কক্সবাজার অঞ্চলে এবার রোজার মাসে অন্তত ১০ জন খুন হয়েছে।
শহর পুলিশ ফাঁড়ি এবং বিজিবি ক্যাম্পের কাছেও হত্যাকাণ্ড ঘটছে। ঈদগাঁও উপজেলায় সাহরির পর একজন যুবক দোকানদার মসজিদে যাওয়ার পথে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। সে বহু দিন ধরে দোকান চালাত। আমগাছতলা এলাকায় বিজিবি ক্যাম্পের পাশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী ছিনতাইকারীর হাতে প্রাণ দিলেন। সদর উপজেলার পিএমখালীতে জনৈক রোজাদার যুবককে ইফতারের আগ মুহূর্তে শত শত লোকের সামনে মারধর করে হত্যা করা হয়। তিনি ঘাতকদের কাছে আকুতি জানান, ‘আমি এখন রোজাদার। আমাকে মেরো না। ইফতার করে নিই।’ কিন্তু এ আবেদনে ওরা সাড়া দেয়নি। এ দিকে কিশোর গ্যাং আবার খুন করেছে এক যুবককে। এর প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভ করা হয়েছে। খেলার প্রাইজমানি নিয়ে পর্যন্ত খুনাখুনি হচ্ছে। গরিব ছেলেকেও হত্যা করা হয়।
একজন সমাজসেবী বলেছেন, “বিশেষত ‘কিশোর গ্যাং’ এখন আতঙ্কের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ওদের বেপরোয়া খুনের শিকার এমনকি পুলিশসহ অনেকে। গুরুতর আহত ও পঙ্গু হলেন বহু মানুষ। এরা অনেক মহিলাকে ধর্ষণ করেছে। মানুষ ভয়ে তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না। এ পর্যটন শহরকে কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাস ও অপরাধ থেকে অবিলম্বে মুক্ত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন এখনই কঠোর সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।” নাগরিক সমাজের এক নেতা বলেন, ‘কক্সবাজার পর্যটন নগরীর পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সঠিক সময়ে যথাযথ বিচার জরুরি। অপরাধপ্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। অপরাধীরা কিভাবে ও কেন বেপরোয়া হতে পারে? প্রশাসন ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক হতে হবে।’ তবুও স্থানীয় এসপির ভাষায়, ‘অনেক অপরাধই ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা। তিনি বলেন, ‘যখন যেখানে যা ঘটছে, ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বহু ঘটনার তদন্ত চলছে। তাই আইনশৃঙ্খলার একেবারে অবনতি হয়নি। তবুও পুলিশ জোরালো চেষ্টা চালাচ্ছে। পর্যটন এলাকায় অভিযান চলছে অপরাধী ধরার জন্য।’
সবিশেষ উল্লেখ্য, স্থানীয় নোংরা রাজনীতির দরুন এবং জমির দাম বাড়ায় অপরাধ বেড়েছে। তুচ্ছ ঘটনায় কিশোররা পর্যন্ত পরস্পর হানাহানি করছে। এতে সামাজিক অস্থিরতা ছাড়াও অল্প বয়সেই ওদের গায়ে লাগছে রক্তের দাগ। দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে নিস্তার নেই বাবা-মা-শিক্ষকেরও।
ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, পুলিশের দায়সারা গোছের মনোভাব এবং ক্ষমতাসীনদের কয়েক নেতার আশকারা বন্ধ হলে অপরাধ হ্রাস পাবে। রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকায় আইনের ধার ধারছে না এবং নতুন নতুন অপরাধে লিপ্ত হয় বখে যাওয়া কিশোররা এবং জেলফেরত অপরাধীরা।
আমরা মনে করি, সমাজের শৃঙ্খলা এবং পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতির স্বার্থে এসবের কঠোরভাবে মোকাবেলা করা চাই। এ জন্য সর্বাগ্রে আইনের শাসন জরুরি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা