আনন্দযাত্রা হতে পারে মহা ভোগান্তির
- ১৯ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
দুই বছর ধরে চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ঈদ এসেছে চারটি। এ সময় লকডাউন, আইসোলেশন, সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদির কড়াকড়ি ছিল। তাই গ্রামের বাড়ি গিয়ে স্বজনের সাথে ঈদ আনন্দে শরিক হতে পারেননি বেশির ভাগ মানুষ। করোনা সংক্রমণ এখন নিস্তেজ হয়ে এসেছে। নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রথম ঈদ আসছে। তাই এবার নাড়ির টানে ঘরে ফেরার তাগিদ থাকবে সবার মধ্যেই। ধারণা করা হচ্ছে, বিপুলসংখ্যক মানুষের চাপ সামলাতে পারবে না আমাদের অপ্রস্তুত জাতীয় মহাসড়কগুলো। এতে পথে পথে বড় ধরনের দুর্ভোগের শিকার হতে পারেন যাত্রীরা।
বাস, লঞ্চ, স্টিমারে ঈদ সামনে রেখে টিকিটের দাম বাড়িয়েছেন পরিবহন মালিকরা। রয়েছে যানবাহন সঙ্কটও। অনেক সড়ক ভাঙাচোরা, কোথাও নির্মাণকাজ চলছে। এরই মধ্যে অনেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। মহাসড়কে যানবাহনের ভিড় বেড়েছে। এমনকি পথের যেখানেই নামেন না কেন যাত্রীকে ভাড়া দিতে হবে শেষ গন্তব্যের, এমনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিছু পরিবহন সংস্থা। একটি সভ্য দেশে নৈরাজ্যের এর চেয়ে বড় দৃষ্টান্ত আর কী হতে পারে?
ঢাকা থেকে বেরোনোর পথগুলোয় এখনই শুরু হয়েছে যানজট। আগামী সপ্তাহে স্কুল-কলেজ বন্ধ হলে সবাই যখন বাড়ির পথ ধরবেন তখন এ যানজট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এমন আশঙ্কার কথা জানান পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, রাজধানীর গাবতলী-নবীনগর-ধামরাই, এয়ারপোর্ট-আশুলিয়া-বাইপাইল, এয়ারপোর্ট-গাজীপুর মহাসড়কের কোথাও ভাঙাচোরা, কোথাও চলছে উন্নয়নকাজ। সড়কের ফুটপাথসহ অনেক জায়গা হকারদের দখলে। অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশাসহ ছোট যান। এসব কারণে রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথে যানজট লেগে যাচ্ছে।
এবার ট্রেনে যাত্রীর পরিমাণ পাঁচগুণ বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যারা বিমানে যেতে চান তাদেরও ইচ্ছা পূরণের সম্ভাবনা কম। এরই মধ্যে সব রুটের সব এয়ারলাইন্সের টিকিট ফুরিয়ে গেছে। সুতরাং সড়কপথই হবে বেশির ভাগ মানুষের শেষ অবলম্বন।
কিন্তু সড়কপথের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। জয়দেবপুর থেকে উত্তরাঞ্চলগামী মহাসড়কে গত এক দশক ধরে নির্মাণকাজ চলছে। এর যেন কোনো শেষ নেই। জনদুর্ভোগের বিষয়টি কর্তাদের কাছে বিবেচ্য বলে মনে হয় না। ঈদ আসবে এবং তখন সড়কে বাড়তি চাপ পড়বে এটা কারো অজানা নয়। কিন্তু সে জন্য কোনো প্রস্তুতি নেয়া হয়নি।
জয়দেবপুরের ভোগড়া থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণ হচ্ছে ১০ বছর ধরে। ব্যয় হচ্ছে ছয় হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। এত টাকা ব্যয়ে বানানো সড়ক মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবর্তে শুধুই দুর্ভোগের কারণ হলে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন জাগে। এ কারণেই অনেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তাকে এখন ‘জাহান্নামের চৌরাস্তা’ বলেন।
যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের হাটিকুমরুল-রংপুর অংশেরও নির্মাণকাজ চলছে। সেখানেও মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এ নিয়ে সড়ক নির্মাণ কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা আছে মনে হয় না। থাকলে নির্মাণকাজ এমনভাবে গুছিয়ে রাখা যেত যাতে ঈদের দিনগুলোয় অতিরিক্ত যানবাহন নির্বিঘ্নে চলতে পারে। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদীউজ্জামানের একটি বক্তব্য উল্লেখযোগ্য। তিনি একটি দৈনিককে বলেছেন, ঈদ হুট করে আসে না। ঈদ কবে হবে, তা আগেই জানা থাকে। ঈদের প্রস্তুতি তো ছয় মাস আগে থেকে নেয়া উচিত। যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ভোগান্তির শঙ্কা করা হচ্ছে, সেগুলো তো বহু আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কেন হয়নি, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিবারই ঈদের আগে বলা হয়, যাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। তারপরও ভোগান্তি হয়। কী কারণে, কার দায়ে ভোগান্তি হয়েছে, তা কি দেখা হয়? এটা দেখলে ভোগান্তি কমবে।
আমরা এ বিষয়ে একেবারেই নিষ্ক্রিয়। কারো দায় নির্ধারণ করে শাস্তি বা পুরস্কারের বিধি ব্যবস্থা আমাদের নেই। থাকলে এমনটা হতে পারত না। যে দেশে সবাই কেবল নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত সেখানে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সম্ভবত কখনোই শেষ হওয়ার নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা