২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বাঁধ ভেঙে হাওরে ঢুকছে পানি

বিপুল ফসলহানির আশঙ্কা

-

বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচলে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। দেশের ভেতর সিলেটেও বৃষ্টি হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, পর্যবেক্ষণের আওতাধীন ৩৯টি নদ-নদীর মধ্যে ৩৩টির পানি বেড়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় সবক’টি নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছিল। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে হাওরে অনেক বাঁধ তলিয়ে যেতে পারে। আর পানির চাপ কমলে ফসল রক্ষা পাবে। তা না হলে বিপুল ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে।
হাওরের পেকে ওঠা বোরো ধানের অর্ধেকের মতোই এখনো কাটা হয়নি। ফসল হারানোর ভয়ে কৃষক বাধ্য হয়ে কাঁচাপাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে বর্ধিত গুরমার হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় হাওরে পানি ঢুকে পড়েছে। টানা ১৫ দিন চেষ্টা করেও রক্ষা করা যায়নি ওই বাঁধটি। গুরমার হাওরের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আট-দশটি গ্রামের কৃষকদের জমির ধান পানিতে ডুবে যাচ্ছে।
বন্যার আশঙ্কায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে হাওরবেষ্টিত তিন জেলা সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের সব কৃষকের। পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে একের পর এক ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ। ডুবে যাচ্ছে কৃষকদের কাঁচা ও আধাপাকা ধান। বাঁধভাঙা ঠেকাতে কৃষক দিনরাত চেষ্টা করছেন। তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। নতুন করে বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়ায় বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক। ধান যখন পাকতে শুরু করে তখন ২ এপ্রিল আকস্মিকভাবে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওরের নিচু এলাকার বোরো ফসল তলিয়ে যায়। সে সময় শত শত কৃষক প্রশাসনের সহায়তায় স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষার প্রাণান্ত চেষ্টা চালান। এতে কিছু ফসল রক্ষা হয়।
এ বছর এপ্রিলের শুরুতেই প্রকৃতি অস্বাভাবিক আচরণ করছে বলে আবহাওয়াবিদদের অভিমত। এর অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। উজানে বৃষ্টি হওয়ায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এ অবস্থায় হাওর এলাকায় বন্যার পানি প্রথম প্রবেশ করে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে। এ কারণে সেখানকার বাঁধগুলো বেশি ঝুঁকিতে আছে। কয়েকটি স্থানে বাঁধে ফাটল ধরেছে। বাঁধগুলো দ্রুত মেরামত করা না হলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।
এদিকে হাওরে ধান কাটার শ্রমিকসঙ্কটও আছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, গত দুই বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্ষেতমজুর আনা হলেও এবার সেই পরিকল্পনা নেই। সপ্তাহখানেক সময় পেলে সব ধান কেটে শেষ করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হাওরাঞ্চলে যে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ধান উৎপন্ন হয়, তার বেশির ভাগই এখন ঝুঁকিতে। এ ঝুঁকি কমাতে উপায় ছিল যথাসময়ে ফসল রক্ষাবাঁধ মেরামত করা। কিন্তু তা হয়নি। অসময়ে পাউবোর তোড়জোড়ে শেষ রক্ষা হচ্ছে না। তবু যথাসাধ্য বাঁধগুলো মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই হবে কর্তব্য। আর কৃষি বিভাগ কৃষকদের যে পরামর্শ দিয়েছে, যেসব ক্ষেতের ধান ৭০ শতাংশ পেকেছে- তা যেন দ্রুত কেটে ফেলা হয়। কেননা পানি আরো বেড়ে গেলে ধান কাটা আর সম্ভব না-ও হতে পারে। আর যেসব ক্ষেতের ধান এখনো পাকেনি, সেগুলো রক্ষা করতে হলে বাঁধের ফাটলগুলো দ্রুত মেরামত করাতে হবে। সবার আশা, পাউবো বাঁধগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করবে।
স্মরণযোগ্য যে, আমরা হয়তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে পারব না। কিন্তু আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে ক্ষতি খানিকটা কমিয়ে আনা অসম্ভব নয়। সরকার হাওরের ফসল রক্ষায় প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে, পাউবোর এক শ্রেণীর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের দুর্নীতিতে বিপুল টাকা ব্যয়ে প্রতি বছর যে বাঁধ নির্মাণ করা হয় তা ত্রুটির কারণে পানির সামান্য তোড়েই ধসে যায়। ফলে ফসল রক্ষা আর সম্ভব হয় না। আমরা মনে করি, হাওরের ফসল রক্ষা করতে হলে যথাসময়ে বাঁধ মেরামতের কোনো বিকল্প নেই। আগামীতে এ কথাটি সবাইকে মনে রাখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
আইনজীবী হত্যায় উত্তাল চট্টগ্রাম জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ড. ইউনূস বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিভক্ত না হতে মাহাথিরের আহ্বান ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর তিন মাস পার হলেই সব ঋণ খেলাপি মিয়ানমারের জেনারেল মিন অংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইলেন আইসিসির প্রসিকিউটর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন : ফখরুল আইনজীবীর হত্যাকারী ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক’ শুভ কান্তি দাস কে? এশিয়া ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড পেল অধিকার চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ

সকল