নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই
- ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
অপরাধ দমনে পুলিশ বাহিনীর সৃষ্টি। তাই পুলিশ সদস্যরা সম্পূর্ণ অপরাধমুক্ত থাকবেন এটাই প্রত্যাশিত। এ জন্য একসময় পুলিশে কাউকে নিয়োগ দেয়ার আগে তার পরিবারে এমনকি বংশে কখনো কোনো অপরাধপ্রবণতা ছিল কি না খতিয়ে দেখা হতো বলে জানা যায়। এখন সেসব বালাই নেই। যেকোনো সরকারি দফতরের মতোই পুলিশেও একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়। তাই অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিরাও পুলিশে নিয়োগ পেয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।
সম্প্রতি এমন অসংখ্য অপরাধের ঘটনা ঘটছে, যাতে পুলিশ সদস্যরা জড়িত। গতকাল রোববার দেশের গণমাধ্যমের অন্যতম খবর ছিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার বিবিরবাগিচা এলাকার একটি ঘটনা। জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন দিয়ে পুলিশের সাহায্য চেয়েছিল সেখানকার একটি পরিবার। ফোন পেয়ে উল্টো সাহায্যপ্রার্থী পরিবারকেই চরমভাবে নিগ্রহ করে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ। তারা ওই পরিবারের সদস্যদের শুধু মারধরই করেনি, মামলা দিয়ে জেলেও ঢুকিয়েছে। এটা তারা করেছে মূল অপরাধীর পক্ষ নিয়ে। কেন তারা অপরাধীর পক্ষ নেয়, না বোঝার কোনো কারণ নেই।
ঘটনাটি গণমাধ্যমে আসার পর এক এসআইসহ তিন পুলিশ ও এক আনসার সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিও হয়েছে। কিন্তু তদন্ত বা বিচার কতটা কী হবে তা নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কারণ খুব একটা নেই। কারণ এ দেশে অপরাধী পুলিশের বিচার হয় কমই। বেশির ভাগ ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়। যেসব ঘটনায় বিচার হয় সেগুলোতেও যথাযথ শাস্তি হয় না।
সম্প্রতি দেশে খুনখারাবি থেকে শুরু করে প্রতারণা, ছিনতাই, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক, ধর্ষণচেষ্টা, নারীর প্রতি অসম্মানের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে পুলিশ। এ ছাড়া সাধারণ মানুষকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনা তো হামেশা ঘটছে। এসব অপকর্মের কারণে পুলিশ বাহিনীর গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগছে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সারা দেশে প্রতি বছর গড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার পুলিশ সদস্য কোনো-না-কোনো ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এদের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দফতরে অভিযোগ পেশ করেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার হয় এমন নয়। বছরে গড়ে দুই হাজার পুলিশ সদস্যের অপরাধের বিচার হয় এবং নানা মাত্রার দণ্ড দেয়া হয়। অপরাধী এসব পুলিশের একটি বড় অংশ পায় লঘুদণ্ড, কেউ কেউ পায় গুরুদণ্ড।
গণমাধ্যমের বিভিন্ন সময়ের রিপোর্ট অনুসরণ করলে দেখা যায়, অনেকসময় বিভাগীয় ব্যবস্থার নামে যে শাস্তি দেয়া হয়, বিশেষজ্ঞদের মতে তা আসলে কোনো শাস্তিই নয়। অপরাধী পুলিশের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের বিধান আছে; কিন্তু বেশির ভাগ ঘটনায় তা অনুসরণ করা হয় না। গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের বিচারও করা হয় বিভাগীয় আইনে। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ‘বিভাগীয় শাস্তির আওতায়’ আনার বিষয়টি আসলে প্রতারণামূলক। এর মাধ্যমে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ আছে। যারা অপরাধ দমন করবে, যারা আইনের রক্ষক হবে তাদের নৈতিক স্খলন কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
আমাদের জানা মতে, উন্নত বিশ্বে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে আলাদা কমিশন করে তার বিচার করা হয়। বাংলাদেশেও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত এবং শাস্তি নিশ্চিত করতে দুর্নীতি দমন কমিশন বা নির্বাচন কমিশনের মতো স্বাধীন কমিশন গঠনের ব্যাপারে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে আমরা কমিশন গঠনের বিষয়ে আশাবাদী নই। কারণ নির্বাচন কমিশন বা মানবাধিকার কমিশনের নৈরাশ্যজনক ভূমিকা আমরা দেখেছি। মানবাধিকার কমিশন অস্তিত্বশীল থাকতেই এ দেশের জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিজাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে এসেছে। সুতরাং কমিশন গঠন কোনো সমাধান নয়। দরকার শৈশব থেকে প্রতিটি নাগরিককে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। সেটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেমন, তেমনই কর্মস্থলের প্রশিক্ষণেও দিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা