নিরাপত্তাহীন সাধারণ মানুষ
- ১৭ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
সারা দেশে প্রতিনিয়ত ঘটছে খুনসহ নৃশংস সব ঘটনা। এতে করে সাধারণ মানুষের মনে ভীতি ছড়িয়ে সামগ্রিকভাবে যে নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে; তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে কারো বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সাম্প্রতিক সময়ে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা অনেকাংশেই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। বাস্তবে এলাকায় এলাকায় সন্ত্রাসীদের কাছে গণমানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। সাধারণ নাগরিকরা জান-মাল নিয়ে শঙ্কিত।
গত বুধবারের দু’টি ঘটনা উল্লেখ করলে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়টি উপলব্ধিতে আসবে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত দু’টি খবর এখন দেশজুড়ে আলোচিত। ওই দু’টি ঘটনার একটি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় সংঘটিত হয়েছে। সেখানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাবার কোলে চার বছর বয়সের শিশুকন্যা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। একই ঘটনায় তার বাবাও গুলিবিদ্ধ হন। নিহত শিশুটির নাম তাসফিয়া আক্তার ওরফে জান্নাত। তার বাবার নাম আবু জাহের।
আবহমানকাল ধরে আমাদের সমাজে একটি কথা চালু আছে, বাবার কোল শিশুর নিরাপদ স্থান। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই নিরাপদ স্থানও বর্তমান সময়ে এসে অনিরাপদ বিপদসঙ্কুল হয়ে উঠেছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০০২ সালে রাজধানী ঢাকার বাড্ডায় এ ধরনের আরো একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী নিহত শিশুর স্বজনদের সান্ত্বনা জানাতে গিয়ে গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন’। বাবার কোলে থাকা ছোট শিশু নওশীন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর শোকার্ত পরিবার, দেশবাসীকে অবাক করে তার ওই মন্তব্য তখন দেশব্যাপী ঝড় তোলে। কথা ওঠে, তাহলে তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার আদৌ দরকার আছে কি না। ওই মন্তব্যের জেরে আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ হারাতে হয়।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভারতের সীমান্তঘেঁষা হায়দ্রাবাদনগর এলাকায়। বুধবার রাতে মাদক কারবারিদের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার। তিনি কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত ‘কুমিল্লার ডাক’ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন। পুলিশের তথ্য মতে, সাংবাদিক মহিউদ্দিনকে মাদক-সংক্রান্ত তথ্য দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
সবার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হলো- এই সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত পুলিশ এখনো ওই দু’টি ঘটনায় জড়িত হোতাদের গ্রেফতার করতে পারেনি। বিশেষ করে গত বুধবার বিকেলে শিশুকন্যা তাসফিয়া আক্তার বাবার কোলেই গুলিতে ঝাঁজরা হয়। আহন হন বাবাও। এমন নৃশংসতার পরও দ্রুত মূল হোতা গ্রেফতার না হওয়া উদ্বেগজনক বৈকি। উল্লিখিত দু’টি ঘটনার বিচার দাবিতে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিক সমাজ প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ-মানববন্ধন করেছে। কিন্তু পুলিশ সব আসামিকে এখনো ধরতে না পারায় তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। আমরা দেখেছি, দেশে এমন অনেক আলোচিত ঘটনার বিচারকাজ তো দূরের কথা, তদন্ত প্রতিবেদনই জমা দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার কথা সবার আগে এসে যায়। দীর্ঘ এক যুগেও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা।
প্রশ্ন হলো, কেন আমরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি? এ কথা বলা অসঙ্গত নয় যে, দেশে সুশাসনের অভাবে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যথাযথ জবাবদিহির অভাবে একধরনের উদাসীনতা জেঁকে বসে। দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অবস্থাও তেমন বলেই মনে হয়। এর অন্যতম কারণ, দীর্ঘ দিন ধরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকারের ব্যবহার। এ কারণে ভিন্নমত দমনে পুলিশের অনেক সদস্য যতটা উৎসাহী, তাদের মূল কাজ, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ততটা মনোযোগী নয় বলেই প্রতীয়মান হয়।
আমরা মনে করি, সারা দেশে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা রোধে পুলিশ বাহিনীকে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, তারা রাষ্ট্রের কর্মচারী। জনগণের করের টাকায় বেতনভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন তারা। কথাটি স্মরণে রেখেই তাদের কর্তব্যকাজ সম্পাদন করতে হবে। তবেই সম্ভব দেশে আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে স্থিতিশীল সমাজ উপহার দেয়া।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা