কেন আজো দূর করা হয়নি?
- ১৭ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর সিলেটে যেমন হাওরের বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা সেখানকার মানুষের নিদারুণ উদ্বেগের বড় কারণ, তেমনি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বৃহত্তর খুলনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা মানুষের দুশ্চিন্তার বড় হেতু বছরের এ সময়ে। আজো বাঁধ নিয়ে তাদের দুর্ভাবনার ইতি কেন ঘটানো হয়নি, এ জিজ্ঞাসা কর্তৃপক্ষের কাছে দেশবাসীর। নয়া দিগন্তের এক সচিত্র প্রতিবেদনে খুলনা ব্যুরো এ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছে।
জানা গেছে, সুন্দরবনের লাগোয়া দীর্ঘ উপকূলে বেড়িবাঁধের ঝুঁকি নিয়ে আবার জনমনে আতঙ্ক। যেমন, জোয়ারের সময়ে ঢাকী নদীর পানির তোড়ে খুলনার দাকোপ উপজেলার বাঁধে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে ভাঙছে। ৩২ নম্বর পোল্ডারের কামারখোলার হাটখোলা গেটসংলগ্ন বাঁধের অংশে এ মুহূর্তে সংস্কার করা না হলে আবারো সর্বস্ব হারাবে কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নবাসী।
জানা যায়, একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতির ভয়াবহ শিকার উপকূলীয় জনপদ, যা ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ সুন্দরবনের গা-ঘেঁষে অবস্থিত। ফলে নিদারুণ অভিজ্ঞতার জের ধরে, বেড়িবাঁধের ভাঙন সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে আবার। এ বাঁধ সংস্কার করা না হলে জমি অনাবাদি থাকবে এবং অনেক জমিতে বছরে তিনটি ফসল ফলানোর স্বপ্ন তছনছ হয়ে যাবে। স্মর্তব্য, এক যুগ আগে ‘আইলা’ ঝড়ের জলোচ্ছ্বাসে দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়ন দু’টি বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং তখন লোনায় ডুবে যায় ফসলি ক্ষেতখামার। ফলে লোনা পানির অনুপ্রবেশ দীর্ঘ প্রভাব ফেলে স্থানীয় ফসলের জমিতে। তখন অনেকে বসতি গুটিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন। যারা থেকে যান, তারা লোনা পানিতে চিংড়ি চাষের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ালেন। অনেক জনপ্রতিনিধিও তাদের সমর্থন দিয়েছেন। ফলে চিংড়ি চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শিবসা, ভদ্রা ও ঢাকী নদীকূলে বাঁধ দেয়ায় লোনা পানির আগমন প্রতিরুদ্ধ হয়। ফলে কয়েক জায়গায় বিশেষ করে তরমুজ চাষে বেশ সুবিধা হয়েছিল। তরমুজের পরপরই আমন ধান ও রবিশস্যের চাষ করা সম্ভব হয়, যা মাত্র ক’বছর আগেও ছিল যেন স্বপ্ন।
উপকূলের বেড়িবাঁধে ভাঙন যাতে আর না হয়, সে জন্য এবং উপকূলের মানুষকে প্রকৃতির দুর্যোগ থেকে বাঁচাতে, ২০১৩ সালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থে বাংলাদেশ সরকার বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প-১ হাতে নেয়। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংস্থা-পাউবোর আওতায় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হলো তিন হাজার ২৮০ কোটি টাকা। আর বাস্তবায়নের সময় ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। দীর্ঘ ৯ বছরের এ প্রকল্পের আওতায় আছে খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরগুনা, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী জেলা। সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় এক লাখ ৬৩ হাজার ৫০ একর জমি রয়েছে। আর সেচ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত জমির পরিমাণ এক লাখ ৩০ হাজার ১৫৭ একর। প্রকল্পের মধ্যে আছে ৪১২ কিলোমিটার বাঁধের নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ, নিষ্কাশন খাল খনন এবং পুনরায় খনন ৩০৬ কিলোমিটার, ৮৯টি নিষ্কাশন অবকাঠামো, ৮১টি ফ্লাশিং ইনলেট, ২৯ কিলোমিটারজুড়ে বাঁধের ঢাল প্রতিরক্ষা, নদীর তীর সংরক্ষণ ১৪ কিলোমিটার এবং বনায়ন এক হাজার ৭২৯ একর। অবশ্য গুরুত্ববহ এই প্রকল্প অনেকাংশে অসমাপ্ত রয়ে গেছে।
একজন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘ঢাকী নদীতীরে জিও ব্যাগের ডাম্পিংও ভাঙন রোধ করতে পারেনি। ইতোমধ্যে কামারখোলা, সুতারখালী, কলাবগি, জালিয়াখালীতে বাঁধ নদীতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে আংশিক বা সম্পূর্ণ।’ খুলনার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ‘বাঁধের ৩২ নম্বর পোল্ডার বিশ্বব্যাংকের উপকূলীয় পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়। তাই এ সম্পর্কে আমাদের হাতে অধিক তথ্য নেই।’
প্রকল্প যারই হোক না কেন, কথা হচ্ছে- জনগণের জানমালের স্বার্থে কেন বাঁধের নিরাপত্তা আজো নিশ্চিত করা হবে না?
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা