স্বাবলম্বী হওয়ার এখনই সময়
- ১৪ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
গার্মেন্ট খাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী কয়েকটি দেশ রয়েছে নানা সঙ্কটে। প্রধান প্রতিযোগী চীনে করোনার প্রভাব এখনো যথেষ্ট। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রতিযোগী যথাক্রমে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াও করোনাজনিত সমস্যায়। দেশ দু’টি চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে পোশাক তৈরি করে। এর বাইরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিকভাবে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। আর রাজনৈতিক সঙ্কটে হাবুডুবু খাচ্ছে পাকিস্তান। মিয়ানমারেও অস্থিরতা বিদ্যমান। এ পরিস্থিতিতে তৈরী পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের সামনে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছেন।
প্রতিযোগী সব দেশই আমাদের বন্ধুপ্রতিম। দেশগুলোর সঙ্কটে খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই; তা শোভনও নয়। কিন্তু অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক এবং কাক্সিক্ষতও। বাংলাদেশের জন্য যে সুযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়েছে তা পায়ে ঠেলার কোনো কারণ নেই।
গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, চীনের অনেক ক্রেতা এখন বাংলাদেশে আসছেন। মিয়ানমারের ক্রেতাদের অনেকে বছরখানেকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্ট সামগ্রী কিনছেন। শ্রীলঙ্কার পোশাক রফতানির পরিমাণ ৬০০ কোটি ডলারের। কিন্তু রফতানি পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিক রাখতে পারছে না দেশটি। এমন বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পোশাক ক্রেতারা শ্রীলঙ্কা থেকে মুখ ফিরিয়ে বাংলাদেশে আসছেন। সঙ্কট দীর্ঘ হলে বেশির ভাগ ক্রেতাই চলে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ দিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কট দেশটির রফতানিতে কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। দেশটির পোশাক রফতানির পরিমাণ হাজার কোটি ডলারের বেশি। সঙ্কট মাত্রা ছাড়ালে বাংলাদেশে বাড়তি অর্ডার আসার সম্ভাবনা যথেষ্ট।
এরই মধ্যে বাংলাদেশে বায়ারের আগমন ও অর্ডারের পরিমাণ বেড়েছে বলে গার্মেন্ট মালিকরা জানিয়েছেন। এমনকি বায়াররা পোশাকের বাড়তি দামও দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে এখন বসন্তের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের ক্রেতারা এলে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি স্বর্ণযুগে প্রবেশ করবে।
করোনা মহামারীর কারণে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের সঙ্কটে রয়েছে। তবে এ মুহূর্তে মহামারীর প্রকোপ অবসানের দিকে। সবধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অবাধে ও স্বাভাবিক গতিতে চলছে। এখন যেকোনো সুযোগ লুফে নেয়ার সময়।
গার্মেন্ট খাতের সম্ভাবনা পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে আমাদের তৈরী পোশাক কারখানাগুলোতে দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। সাধারণ ও স্বল্পমূল্যের পোশাকের পরিবর্তে উচ্চমূল্যের পোশাক প্রস্তুত ও রফতানির দিকে যেতে হবে। বিগত ৪০ বছরের খাতটি এখনো কম দামের পোশাক রফতানিতে পারদর্শী। ৩৫ ডলারের বেশি দামের পোশাক রফতানি করতে পারে না। অথচ বিশ্বে উচ্চমূল্যের পোশাকের বাজার দ্রুত বাড়ছে। এর সম্ভাবনাও অনেক। উচ্চমূল্যের পোশাকের দাম প্রচলিত পোশাকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। মুনাফাও আসে ভালো। অথচ দামি পোশাক রফতানি থেকে বাংলাদেশের আয় প্রায় শূন্য। এর কারণ, উচ্চমূল্যের পোশাক তৈরির কাঁচামাল দেশে নেই। বিদেশ থেকে আমদানি করা সম্ভব। কিন্তু এসব পোশাক তৈরির মতো দক্ষ শ্রমিক নেই। সেই ঘাটতি পূরণ করতে হবে। বর্তমানে প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার পোশাক কারখানায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে ২৫-৩০ লাখ শ্রমিক কর্মরত। কিন্তু এদের বড় অংশই অদক্ষ। সুতরাং সাধারণ পোশাক তৈরির শ্রমিকদেরও বিপুল সংখ্যককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে গার্মেন্ট শিল্পে শ্রমিকের চাহিদা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে অন্তত ২০ লাখ নতুন শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সেই সাথে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পণ্য সরাসরি পাঠানোর নৌপথ নিয়মিত করতে হবে। এ দেশে তৈরী পোশাকের ৬০ ভাগেরই গন্তব্য ইউরোপ। সেখানকার বাজারে পণ্য পাঠানোর সরাসরি কোনো রুট নেই। ইউরোপীয় ক্রেতাদের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে করে সেখানে পণ্য সরাসরি নিয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত আছে। সেই রুটটি নিয়মিতকরণ করা উচিত। তাতে বিপুল পরিবহন ব্যয় সাশ্রয় হবে, সময়ও বাঁচবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা