২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মারামারি-সহিংসতা থেকে খুন

সঙ্কটের গোড়ায় যেতে হবে

-

আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে খোদ পুলিশের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুরের শ্রীবরদীতে। মামলার পর প্রতিপক্ষ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও হত্যাকাণ্ড রোধে ভূমিকা রাখেনি। বাস্তবে দেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের শেষ নেই। তাদের বিরুদ্ধেই গুম খুনের অনেক অভিযোগ। আবার প্রতিকার চাওয়ার পর তাদের উপস্থিতিতে সেই ব্যক্তি খুন হলেন। সামাজিক মাধ্যমে ঘটনাটির একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা এমন যে, দেশে সামান্য বিরোধ কিংবা সাধারণ কোনো ঘটনা নিয়ে হত্যা খুন জখম অহরহ ঘটছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দেশে গত তিন মাসের পারিবারিক সহিংসতার একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, অবলীলায় নারী ও শিশুরা খুন হচ্ছে পরিবারের অন্য সদস্যদের হাতে।
গত রোববার নরসিংদীতে বড় দুই ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন হয়েছেন। সামান্য বৈদ্যুতিক মিটার নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে নির্দয় ঘটনাটি ঘটে। একই দিন পারিবারিক কলহে বাগেরহাটে ছেলে পিটিয়ে হত্যা করেছে বৃদ্ধ বাবাকে। তার কিছু দিন আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে যৌতুকের জন্য শিশুসন্তানের সামনে গলা টিপে স্বামী হত্যা করেছে স্ত্রীকে। আসকের প্রতিবেদনে জানা যায়, পারিবারিক কলহে গত তিন মাসে ৬৬ নারী ও ৩১ শিশু খুন হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৮ নারী স্বামীর হাতে খুন হওয়ার অভিযোগ। ১০ জন খুন হয়েছেন স্বামীর পরিবারের সদস্যদের হাতে। একই সময় ২৪ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। এগুলোর পেছনেও পারিবারিক কলহ নিপীড়ন প্রধান ভূমিকা রেখেছে।
আসকের ওই প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, পুরুষরাও একই ধরনের পারিবারিক কলহে খুন হচ্ছেন। সাভারের বনগাঁওয়ে স্ত্রী ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে স্বামীকে খুন করিয়েছেন। শিশু হত্যার ক্ষেত্রেও নারীদের নিষ্ঠুরতা লক্ষণীয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে সাত ও পাঁচ বছরের দুই সন্তানকে হত্যা করেন মা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারির চেয়ে ফেব্রুয়ারিতে পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। জেনোসাইড স্টাডিজ ২০২০ সালে পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে আরেকটি জরিপ চালায়। সেখানে দেখা গেছে, পরিবারে সহিংসতার প্রধান শিকার নারী ও শিশুরা। সহিংসতার ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নির্মমতা ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের প্রত্যেকটি অংশের মধ্যে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র সব পরিবারেই সমানতালে নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন পারিবারিক কলহ হিসেবে মনে করার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।
বিশেষজ্ঞরা পরিবারিক সহিংসতায় সদস্যদের মানসিক সমস্যাকে বড় করে দেখছেন। তাদের মতে, পরিবারের সদস্যদের মানসিক সমস্যাগুলো সেভাবে চিহ্নিত করা হয় না। তারা এসবের সমাধানে মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। বাস্তবতা হচ্ছে, সারা দেশে খুনখারাবির সামগ্রিক চিত্র ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন নতুন নতুন নিষ্ঠুরতার খবর আমরা পাই। দেশের সার্বিক অপরাধপ্রবণতা নিয়ে কোনো সমন্বিত জরিপ নেই। ফলে এ ব্যাপারে সঠিক চিত্র কারো কাছে নেই। আমাদের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সামাজিক স্তরে যে প্রভাব ফেলছে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে পরিবারে। পূর্বশত্রুতা, জমিজিরাত নিয়ে বিরোধ, রাজনৈতিক বিরোধ, উপদলীয় কোন্দল ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার খায়েশ পুরো দেশে ব্যাপক হারে সহিংসতার বিস্তার ঘটাচ্ছে। সামাজিক স্থিতির জন্য তাই পুরো বিষয়টি সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। দেশে এখন চলছে বিপুল দুর্নীতি অনিয়ম বিশৃঙ্খলা আর বিচারহীনতা। তারই প্রভাবে সমাজের সব স্তরে ছড়িয়ে পড়ছে সহিংসতা; আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা। এ জন্য জাতীয় পর্যায় থেকে নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আইনজীবী হত্যায় উত্তাল চট্টগ্রাম জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ড. ইউনূস বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিভক্ত না হতে মাহাথিরের আহ্বান ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর তিন মাস পার হলেই সব ঋণ খেলাপি মিয়ানমারের জেনারেল মিন অংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইলেন আইসিসির প্রসিকিউটর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন : ফখরুল আইনজীবীর হত্যাকারী ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক’ শুভ কান্তি দাস কে? এশিয়া ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড পেল অধিকার চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ

সকল