অপরিকল্পিত উন্নয়ন নয়
- ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
নয়া দিগন্তের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের হেডিং- ‘কলাপাড়ায় কমছে কৃষিজমি; ফসল উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা’। আসলে গোটা দেশেই এ সমস্যা; কেবল পটুয়াখালীর উপকূলে নয়। জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলায় ‘ব্যাপক’ উন্নয়নকাজে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে; পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের দু’পাশে দেখা যায়, ফসলের জমিতে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন কোম্পানির সাইনবোর্ড।
ফসলের মাঠে গড়ে উঠেছে নয়া বসতি, মাছের ঘের, তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, শেরেবাংলা নৌঘাঁটি, ইটভাটা প্রভৃতি। বিশেষত আবাসন, বিদ্যুৎকেন্দ্র, বন্দর, ঘাঁটি ও ভাটার কাজে আবাদি জমির ব্যবহার চরমে। এর থেকে বাদ পড়েনি খাল-বিল পুকুর নদীনালার মতো জলাশয়ও। সেখানে আজ গড়ে উঠছে প্রাসাদ বা পাকা ভবন, দোকানপাটসহ রকমারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এভাবে প্রত্যেক বছর নিয়মিত প্রচুর কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এ জমি সুরক্ষায় আইন থাকলেও তার কার্যকর প্রয়োগ না থাকায় যথেচ্ছ ব্যবহারে কৃষিজমিগুলোকে হারাতে হচ্ছে।
জানা যায়, কলাপাড়া উপজেলায় মাছ চাষের নামে অসংখ্য দীঘি ও পুকুর খোঁড়া হয়েছে। তা ছাড়া ইটভাটা চালু করে, মাটি তুলে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। আর জলাশয়ের ভাঙনের দরুন প্রতিনিয়ত কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। বেকার হয়ে যাচ্ছে গরিব কৃষি শ্রমিকরা। তদুপরি, পরিকল্পনা ব্যতীত গ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে।
এ উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, ১১৬ বছর বয়সের কলাপাড়া থানাটি প্রায় চার দশক আগে উপজেলা করা হয়েছে। ৪৯২ বর্গকিলোমিটার পরিসরের কলাপাড়া উপজেলায় আড়াই লাখের মতো মানুষের বাস। এখানে জমি ছিল ৩৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর; কিন্তু গত পাঁচ বছরে কৃষিজমি অনেক হ্রাস পেয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দিনে ৫০ থেকে ১০০ বিঘা করে কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। হারিয়ে গেছে সরকারি খালসহ বহু জলাভূমি। প্রত্যেক বছরই অবকাঠামো উন্নয়নের নামে তৈরি করা হচ্ছে বাড়িঘর, সড়ক বা রাস্তা, ছোট বড় সেতু ইত্যাদি। জলাশয় ভরাটের মাধ্যমে গড়ে উঠছে বসতবাটিসহ অনেক কিছু। এ দিকে জলাবদ্ধতায় চাষাবাদ করা যায় না বলে অনেকে জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন বাধ্য হয়ে। ফসলের উপযুক্ত দাম নেই বলে মালিকরা তাদের জমি দিচ্ছেন ইজারা। অনেক পরিবার বড় হওয়ায় পাকা ধানের জমিতে দেখা যাচ্ছে রঙিন টিনের চালা। জমি কমছে বলে উৎপাদনও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তাই মাত্র এক দশক পরই কলাপাড়ায় চরম খাদ্যঘাটতির আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছে, ’৮৬ সালে আবাদযোগ্য জমি ছিল ৮১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর। ২০০০ সালে এর পরিমাণ ৭১ লাখ ৯ হাজার হেক্টর। এরপর মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে এটা আরো ২২ হাজার হেক্টর কমে যায়। সরকার মনে করে, বছরে ৪০ হাজার একর করে আবাদি জমি হ্রাস পাচ্ছে। সরকারি গবেষণা সংস্থা ‘মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান’ জানায়, ২০০০ সালের পরবর্তী এক যুগে প্রতি বছর এ দেশে ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, কৃষিনীতি-’৯৯ বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, আবাসন প্রভৃতি কারণে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) মনে করে, কৃষিজমি কমছে এ দেশে। পটুয়াখালী ইউনিভার্সিটির জনৈক শিক্ষক বলেন, ‘মানুষ বাড়ছে; জমি কমছে। ভবিষ্যতে এটা অনেক কমে যাবে।’
আমরা মনে করি, উন্নয়ন ও কৃষি দুটোই প্রয়োজন। তবে উন্নয়ন পরিকল্পিত হতে হবে। তা হলে কৃষিজমি রক্ষা পাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা