ওয়াসার সক্ষমতার উৎসব পালন
- ১২ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সঙ্কট চলছে। পান করার মতো পানির সরবরাহ পাচ্ছেন না নগরবাসী। দৈনন্দিন ব্যবহারের পানিও দুর্লভ। যেটুকু পানি পাওয়া যায় তা দুর্গন্ধযুক্ত। কোথাও পানি এমনই দূষিত যে, সে পানি দিয়ে অজু-গোসল করলে শরীরে চুলকানি দেখা দিচ্ছে। অনেকে বাড়তি টাকা খরচ করে ওয়াসার গাড়ির পানি কিনছেন। অভিযোগ আছে, প্রতি গাড়ি পানির দাম ৩০০ টাকা হলেও ওয়াসার কর্মীরা এ জন্য আদায় করছেন ক্ষেত্রবিশেষে ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। অনেকে খাবার পানি সংগ্রহের জন্য ওয়াসার এটিএম বুথ থেকে প্রিপেইড কার্ড করে নিয়েছেন। সেখান থেকে নিয়মিত পানি কিনে আনছেন। এতে অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। তীব্র গরম ও পবিত্র রমজানের এই সময়ে পানি সঙ্কটে চরম সমস্যায় পড়ছেন নগরবাসী। বিশুদ্ধ পানির অভাবে নামাজ, রোজা, ইফতারি ও সাহরি ঠিকমতো করতে পারছেন না তারা।
সম্প্রতি ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতায় হাসপাতালে রোগী ভর্তির রেকর্ড হয়েছে। অসংখ্য মানুষ ডায়রিয়া এবং অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর পেছনে মূল কারণ ওয়াসার সরবরাহ করা নোংরা ও দূষিত পানি। প্রতি বছরই গ্রীষ্মকালে রাজধানীতে এমন সঙ্কট দেখা দেয়। কিন্তু এর কোনো স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি ওয়াসা। ওয়াসার শীর্ষ কর্মকর্তাও নিজের বাড়ির পানিতে দুর্গন্ধ থাকার কথা স্বীকার করেন। এমনই যখন অবস্থা তখনো কিন্তু সরকারি সংস্থাটি তাদের সক্ষমতার উৎসব পালন করতে পিছিয়ে নেই। সমস্যা দূর করতে না পারলেও তাদের দাবি, গত ১২ বছর রাজধানীতে পানি সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। শুধু তা-ই নয়, বিস্ময়কর হলেও সত্য, নিজেদের ঢোল পেটাতে সক্ষমতা বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনারও আয়োজন করে ঢাকা ওয়াসা। সক্ষমতা প্রচারের এই নির্লজ্জতা যে ক্ষমতাসীন রাজনীতির প্রভাবে তাতে সন্দেহ নেই। কারণ ক্ষমতাসীনদের সাফল্য তুলে ধরতে হলে অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি ওয়াসারও সাফল্য দেখানো জরুরি।
রাজধানীর পানি সঙ্কট নিয়ে গত দুই সপ্তাহে গণমাধ্যমে যেসব খবর বেরিয়েছে সেগুলো অনুসরণ করলে স্পষ্ট, নগরীর বিরাট অংশই পানি সঙ্কটের কবলে। ফকিরাপুল এলাকার বাগিচা গলি, মসজিদের গলি, গরমপানির গলিসহ আশপাশের অনেক বাড়িতে গত দেড় সপ্তাহ ধরে পানি সঙ্কট চলছে। ঢাকা ওয়াসার ফকিরাপুল অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, গরমে পানির চাহিদা বেড়েছে। আবার পানির উৎপাদন কম। এ কারণে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাড্ডার খিলবাড়ীর টেকের বাসিন্দারা তিন সপ্তাহ ধরে পানি সঙ্কটে। মধ্যরাতে পাইপলাইনে কিছু পানি এলেও এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর আর পানি থাকে না। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ৩০০ টাকার এক গাড়ি পানির দাম ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন ওয়াসার কর্মীরা। কাঁঠালবাগান এলাকায়ও এক সপ্তাহ ধরে একই রকম সঙ্কট চলছে।
পানির তীব্র সঙ্কট রাজধানীর বাসাবো এলাকায়। পাশের মুগদা এলাকায় পানি সঙ্কট না থাকলেও দুর্গন্ধযুক্ত পানি পানের অযোগ্য। তবে গোড়ান, বাড্ডা, শাহজাদপুর, ভাটারা ও মিরপুর, উত্তরা, দক্ষিণখানসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। দিনের চাহিদা পূরণের মতো পানি মিলছে না। ফলে চৈত্রের চলমান তাবদাহের মধ্যে রোজা রেখে দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন নিরুপায় মানুষ। আর তাতেই ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক এলাকার বিপুলসংখ্যক নগরবাসী।
ওয়াসার উদাসীনতা আর অবহেলায় কারণে অনেক এলাকায় ঠিকমতো পানি সরবরাহ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে; কিন্তু সমস্যার দ্রুত সমাধানের আশ্বাস ছাড়া ওয়াসার কাছে আর কিছুই পাওয়া যায় না। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় পানি সঙ্কটের সমাধানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া দরকার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা