চিকিৎসকদের সংবেদনশীলতা কাম্য
- ১২ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
দেশের স্বাস্থ্য খাত এখনো কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছেনি। তবে অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। তবু প্রতি বছর দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ বিদেশে চিকিৎসাসেবা নিতে যান; বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। এতে করে আমরা হারাচ্ছি বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা।
বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশীর বিদেশে স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশীয় চিকিৎসকদের প্রতি রোগীদের আস্থার সঙ্কট আছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের চিকিৎসকদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। এ ক্ষেত্রে শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের অপেশাদারি আচরণও খানিকটা দায়ী। মাঝে মধ্যে তারা রোগী এবং তার স্বজনদের সাথে এমন দুর্ব্যবহার করেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এ ক্ষেত্রে মানতেই হবে অনেকসময় রোগীর স্বজনরাও চিকিৎসকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। দেখা যায়, হাসপাতালে রোগী মারা গেলে রোগীর স্বজনরা ডাক্তারকে দায়ী করেন। এ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এতে মাঝে মধ্যেই শিক্ষানবিস চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে। গত শনিবার গভীর রাতে তেমনি একটি অমানবিক ঘটনা ঘটেছে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে। সেখানে মায়ের লাশ আটকে রেখে দুই ছেলেকে পুলিশে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তাদের ১৩ ঘণ্টা থানায় আটকে রেখে পরে মুক্তি দেয়া হয়। এ বিষয়ে খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার বলেন, মানুষ মারা গেলে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। সেটি মেনেই নিয়ম অনুযায়ী লাশ ছাড়তে হয়। লাশ আটকে রাখার কিছু নেই। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মহানগরীর দৌলতপুরের পাবলা কারিকর পাড়ার মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের (৬৭) স্ত্রী পিয়ারুন্নেছা (৫৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ৩টায় খুমেক হাসপাতালে মারা যান। চিকিৎসায় অবহেলায় কারণে মায়ের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগে এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের সাথে বাগি¦তণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন মৃতের এক ছেলে। পরে মৃতের স্বামী ক্ষমা চাইলেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের মন গলেনি। এ সময় একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক মৃতের বয়স্ক স্বামীকেও লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে মৃতের অপর দুই ছেলেকে আটকে রেখে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। খবর পেয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এলে তাদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা।
লক্ষণীয়, সরকারি প্রতিটি হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের সাথে শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের প্রায়ই বাড়াবাড়ি আচরণ করতে দেখা যায়। প্রশ্ন হলো, তাদের ক্ষমতার উৎস কোথায় এবং কারা অপেশাদার আচরণ করছেন? সবার জানা, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের লেজুড়বৃত্তি করে কিছু ইন্টার্ন চিকিৎসক হাসপাতালগুলোতে অবৈধ সুবিধা নেন। মূলত তারাই ক্ষমতার দাপটে রোগী এবং স্বজনদের সাথে অবাঞ্ছিত আচরণ করেন। অনেকসময় তা স্বাভাবিক সদাচরণের সীমা ছাড়িয়ে যায়।
দেশে দেশে চিকিৎসকরা সমাজের মানবিক, মানুষের অগ্রগামী হিসেবে বিবেচিত; কিন্তু আমাদের চিকিৎসক-সমাজ মানবিকতার মানদণ্ডে এখনো উত্তীর্ণ হতে পেড়েছেন বলে মনে হয় না। অথচ তাদের হওয়ার কথা ছিল সবার চেয়ে বেশি সংবেদনশীল। চিকিৎসকদের কাছে রোগীরা সবসময় মানবিক আচরণ প্রত্যাশা করেন। কারণ রোগ-শোকে আক্রান্ত ব্যক্তিমাত্রই মানসিকভাবে দুর্বল থাকেন। সঙ্গত কারণে তারা চান ডাক্তার সর্বোচ্চ সহানুভূতি নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেবেন; কিন্তু সে প্রত্যাশা বেশির ভাগ সময়ই অপূর্ণ থাকে। ফলে চিকিৎসকদের প্রতি রোগীদের আস্থাহীনতা বাড়ছে। এ থেকে উত্তরণে চিকিৎসক-সমাজকেই আগে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের হতে হবে মানবিক ও সংবেদনশীল। পাশাপাশি রোগী এবং স্বজনদেরও বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হবে। তবে আমরা খুমেক হাসপাতালের এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানাই। এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার অবতারণা যেন না হয় সেটিই কাম্য।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা