পাকিস্তানে ক্ষমতার পালাবদল
- ১১ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
আমাদের উপমহাদেশের দেশগুলো ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পরই গণতন্ত্রের পথ ধরেছে। দুর্ভাগ্য হলো, এ অঞ্চলের একটি দেশও টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আয়ত্ত করতে পারেনি। একধরনের আধা ও মিশ্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে তাদের উন্নয়নও সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি পাকিস্তানের রাজনীতিতে টালমাটাল অবস্থা তৈরি হয়। ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজের অবস্থান পোক্ত করার জন্য নানা কসরত করেও শেষ পর্যন্ত পদচ্যুতি ঠেকাতে পারেননি। দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ যাবৎ কোনো সরকারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। তবে ইমরান খানের বিদায়ের ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে, দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি স্বাধীন নয়। কোথায় যেন অদৃশ্য সুতার টান রয়ে গেছে। তারা অভিভাবক হিসেবে নিজেদের অবস্থান থেকে কাজ করার পরিবর্তে কখনো এমন ভূমিকা পালন করেন, যা তাদের এখতিয়ারের মধ্যেও পড়ে না। ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটে তেমনটাই দেখা গেছে। এ ছাড়া বহিঃশক্তির প্রভাবের বিষয়টি তো রয়েছেই।
অক্সফোর্ড পড়–য়া ইমরান খান ক্রিকেটার হিসেবে অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব। চমৎকার নেতৃত্ব দিয়ে তিনি পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন। রাজনীতির ময়দানেও দেখিয়েছেন চমক। নতুন দল গঠন করে অল্প সময়ের মধ্যে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসেন তিনি। পশ্চিমাদের ন্যায্য সমালোচনা ছিল তার রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে আমেরিকার ওয়ার অন টেররের সাথী হয়ে কিভাবে পাকিস্তান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিনি তা জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। আফগানিস্তানে আমেরিকার পাততাড়ি গোটানোর পর তিনি তার গলা আরো চড়িয়েছিলেন। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর মুহূর্তে মস্কো সফর করে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে দেখা করেন ইমরান। এ দিকে বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে একজোট হতে থাকে। ইমরানের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ অর্থনৈতিক দুরবস্থা সামাল দিতে না পারা। তিনি যতসব জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেগুলো পূরণ করতে না পারা। ব্যর্থতার সমালোচনার মধ্যেই তিনি পশ্চিমা বিরোধিতায় শাণ দিতে থাকেন। এটিকে জনপ্রিয়তা অর্জনের কৌশলে পরিণত করেন। সংসদে তার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে তিনি বিদেশীদের ষড়যন্ত্র বলে প্রচারণা চালান। ইসলামাবাদে এক বিশাল জনসভা করে জনগণের সামনে তার দলিল হিসেবে নথিপত্রও প্রদর্শন করেন।
সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব এড়িয়ে যাওয়ার জন্য চলমান সংসদ ভেঙে দেয়ার কৌশল নেন ইমরান খান। তত্ত্ব্াবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করে আগাম নির্বাচনের পথে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। বিরোধীরা উচ্চ আদালতে গেলে তার সে কৌশল পণ্ড হয়ে যায়। আদালত সংসদ পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। খবরে জানা যাচ্ছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পিটিআই চেষ্টা চালায় সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব রদ করার জন্য। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে বিদেশীদের ষড়যন্ত্র বলে পদত্যাগ করেন। দলটি অনাস্থা প্রস্তাব ঠেকাতে যেসব চেষ্টা চালিয়েছে তা নৈতিকতার মানে উত্তীর্ণ নয়। শেষ পর্যন্ত এক নজিরবিহীন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সেখানে শনিবার গভীর রাতে ভোটাভুটি হয়। ৩৪২ সদস্যের সংসদে ১৭৪ জন পক্ষে ভোট দেন। এ দিকে পিটিআই দাবি করেছেÑ উচ্চ আদালতের আদেশে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। তাদের মতে, আদালত স্পিকারের আদেশ বাতিল করতে পারেন না। আদালত বিদেশী ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটি আমলে আনেননি বলেও দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ রিভিউ করার দাবিও জানান তারা।
আজ সোমবার সংসদে নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি হবে। এই সরকারের মেয়াদ হবে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। তারপরই জাতীয় পরিষদের নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপাতত ইমরান খানের আগাম নির্বাচনের চেষ্টা বাতিল হয়ে গেল। গণতন্ত্র টেকসই হওয়ার জন্য অনুকূল পরিস্থিতি প্রয়োজন। পাকিস্তানসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোতে সে ধরনের অনুকূল পরিস্থিতি দেখা যায় না। গণতন্ত্রের নামে এসব দেশে বর্ণবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের উত্থানের পেছনে অনেক ক্ষেত্রে বিদেশীদের আনুকূল্য থাকে। অথচ সত্যিকার গণতান্ত্রিক দেশগুলোর উচিত প্রত্যেকটি দেশে প্রকৃত গণতন্ত্রের বিকাশে আনুকূল্য দেয়া। পশ্চিমাদের বৈশ্বিক নীতিতে এর খুব কমই প্রতিফলন ঘটেছে। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে পাকিস্তানে স্থিতি ফিরে আসুক সেটিই প্রত্যাশা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা