বাঁধ ভাঙার কারণ খতিয়ে দেখুন
- ১১ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে আবারও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে হাওরাঞ্চলে। চলতি অর্থবছরেই বিপুল অর্থ ব্যয়ে বাঁধ মেরামত তথা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হলেও গত এক সপ্তাহে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ৯টি বাঁধ ভেঙে গেছে। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে ১০ হাজার হেক্টরেরও বেশি বোরো ফসল। অথচ আর মাত্র সাত দিনের মধ্যে পাকা ধান গোলায় ওঠার কথা। নয়া দিগন্তের খবরে জানা যাচ্ছে, শুধু সুনামগঞ্জ জেলাতেই আরো ৩৫টির বেশি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ফলে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে ফসল ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা পিছু ছাড়ছে না কৃষকদের। ফসলডুবির ভয়ে অনেক কৃষক আধা পাকা ধান কেটে বাড়ি আনছেন।
সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার তিন লাখ ৭৮ হাজার ৭০৫টি পরিবার কৃষিকাজে জড়িত। ফসলহানি হলে এসব পরিবারসহ ফসলের ক্ষেতে মজুরি খেটে রুজি রোজগার করা বিপুলসংখ্যক মানুষের কষ্টের কোনো সীমা থাকে না। জেলা কৃষি অফিসের সূত্রে জানানো হয়, দু’টি উপজেলার অন্তত সাত হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। তবে কৃষকদের দাবিÑ ১০ হাজার হেক্টরের ধান প্লাবিত হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী এখনো জেলার ছোট-বড় ১৩৭টি হাওরই ঝুঁকির মুখে। প্রতিটি ফসল রক্ষা বাঁধে ঢলের পানি ছুঁই ছুঁই করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে হাওরের ৫৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করেছে। এখানে প্রশ্ন হতে পারে কাজ যদি মানসম্মতভাবে করা হয়ে থাকে তাহলে এক ঢলেই ৯টি বাঁধ ভেঙে যায় কিভাবে? প্রকল্পের অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের তসরুপের কারণে ফসল রক্ষা বাঁধ দুর্বল হয়ে থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। কারণ ফসলহানির কারণে যে লাখো মানুষকে এখন খেয়ে-না-খেয়ে সারা বছর দিন গুজরান করতে হবে তাদের প্রতি অপরাধ করেছেন কর্মকর্তারা। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হোক, যাতে করে তাদের কষ্ট একটু লাঘব হয়।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ফসলডুবির কারণ জানতে সরেজমিন গেছেন, বৈঠক করেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করেছেন। এসব এখন তেমন ফলপ্রসূ হবে বলে মনে হয় না। বরং বাঁধ যাতে কোনোভাবেই ভেঙে না যায় সেই ব্যবস্থাটা আরো কয়েক মাস আগে করলে তা কার্যকর হতে পারত।
সুনামগঞ্জের এমপি অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ হাওরের ফসল না ওঠা পর্যন্ত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিবসহ সবাইকে সুনামগঞ্জে অবস্থান করার দাবি জানান সংসদে। মন্ত্রী, সচিবরা উপস্থিত থাকলে কিভাবে বাঁধের ভাঙন রোধ হবে বোধগম্য নয়। বরং ভালো হতো যদি এমপি সাহেব সংসদে দাবি জানিয়ে আগে থেকেই বাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে পারতেন।
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানান, প্রতিটি হাওরের অস্থায়ী বাঁধ এখন ঝুঁকির মুখে। বাঁধ নির্মাণ ও প্রকল্প গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম আছে। হাওরের পরিবেশ প্রতিবেশের বিষয় মাথায় না নিয়ে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র প্রকল্প নেয়ায় এগুলো এখন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু সুনামগঞ্জ নয়, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জের নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় চর এলাকা ও নদী তীরবর্তী নিচু জমি প্লাবিত হয়েছে। সিলেটের একাধিক উপজেলার বোরো ফসল প্লাবনের হুমকিতে। ধান হারানোর আতঙ্কে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন হাওরাঞ্চলের চাষিরা। বাঁধ টিকিয়ে রাখতে এখন তারা দিন-রাত মেরামতকাজে ব্যস্ত। অনেক কৃষক আধা পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন। এ অবস্থার কোনোটিই হতো না যদি বাঁধগুলো মজবুত করে নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা