২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কৃষিপণ্যে ঠকছেন কৃষক-ভোক্তা উভয়ে

চাঁদাবাজিসহ বাজারব্যবস্থাপনা দায়ী

-

কৃষিপণ্য বিপণনে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছতে বেশ কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। প্রতিটি ধাপেই মূল্য বাড়ে। পাশাপাশি মহাসড়কে, টার্মিনালে, ফেরিঘাটে, নগরীর প্রবেশমুখে চাঁদা আদায় হয়। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, কৃষি বিপণন অধিদফতরের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেও ‘রাস্তা খরচ’ খাতে পুলিশের চাঁদার কথা বলা হয়েছে। সবকিছু যোগ করে নির্ধারণ হয় পণ্যের দাম। লাভ যোগ করে খুচরা বিক্রেতা ভোক্তার হাতে দ্রব্য তুলে দেন। নানা খাতে খরচ ও ঘন ঘন হাতবদলে ‘মুনাফা’র হার বেশি হওয়ায় ভর মৌসুমেও কৃষিপণ্য বিশেষ করে সবজির দাম কমছে না। সাথে যুক্ত আছে অসাধু মধ্যস্বত্বভোগী চক্র। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আবদুর রাজ্জাকও বলেছেন, সবজির বিপণনে ‘কিছুটা’ সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে পরিবহন চাঁদাবাজি হচ্ছে। পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগীসহ অনেক সমস্যা রয়েছে।
অবস্থা এমন যে, সরবরাহ বাড়লেও দাম অনেক বেশি। অথচ ভোক্তা যে দামে কিনছেন তার সাথে কৃষকের বিক্রি দামের বিস্তর ফারাক। বাস্তবে দুই প্রান্তের (ঢাকা ও তৃণমূল পর্যায়) সাথে মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে পণ্য উৎপাদনের পর বিক্রি করে ঠকছেন কৃষক। ঢাকায় খুচরা পর্যায়ে চড়া দামে কিনতে গিয়ে ঠকছেন ভোক্তা। লাভবান হচ্ছে শুধু মধ্যস্বত্বভোগীরা। কৃষকের পণ্য মাঠ থেকে শহরাঞ্চল বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার খুচরা বাজারে পৌঁছাতে পণ্যের দাম চার থেকে পাঁচ দফা বেড়ে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে কৃষি বিপণন অধিদফতরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মধ্যস্বত্বভোগী, পরিবহন খরচ ও পুলিশের চাঁদাবাজিকে দায়ী করা হয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিলেও বেশির ভাগই ক্ষেত্রেই তা থেকে সুফল মিলছে না। পরিণামে খুচরা বাজারে পণ্যের দাম বাড়লেও কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে।
কৃষি বিপণন অধিদফতরের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, কৃষক পর্যায়ে এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয় সাত টাকা ৬০ পয়সা। কৃষক স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে এ আলু প্রতি কেজি আট টাকা ৮৫ পয়সায় বিক্রি করছেন। কৃষকের মুনাফা সাড়ে ১৬ শতাংশ। স্থানীয় ব্যবসায়ী পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন ১২ টাকা ২০ পয়সায়। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মুনাফা করছেন প্রায় ৩৮ শতাংশ। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এক কেজি আলু খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন ১৭ টাকায়। তাদের মুনাফা প্রায় ৪০ শতাংশ। খুচরা ব্যবসায়ী একই আলু ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রি করছেন ২২ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীদের মুনাফা হচ্ছে প্রায় ৩০ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কৃষকের সাত টাকা ৬০ পয়সার এক কেজি আলু ভোক্তা কিনছেন ২২ টাকায়। অর্থাৎ কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে এক কেজি আলু পাঁচ দফা হাতবদল হচ্ছে। দাম বাড়ছে ১৪ টাকা ৪০ পয়সা বা ১৯০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ছে পাইকারি থেকে ভোক্তার কাছে আসতে। এভাবে প্রায় সব পণ্যের দামই বাড়ছে। এর মধ্যে চাঁদাবাজির অর্থও রয়েছে।
দেশে কৃষিপণ্য বিক্রিতে যে বাজারব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে তাতে মাঠপর্যায়ে কৃষক আর বাজারে ভোক্তা উভয়েই মাত্রাতিরিক্ত ঠকছেন। এর মূল কারণ বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় মধ্যস্বত্বভোগীর অতি মুনাফা। যদি কৃষক পর্যায় থেকে সরাসরি পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্য বিক্রির উপায় থাকত, তবে মধ্যস্বত্বভোগীরা অতি মুনাফা লুটতে পারত না। এতে করে কৃষক-ভোক্তা উভয়ে লাভবান হতেন।
বাজার বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি, সরাসরি মাঠপর্যায়ে কৃষক থেকে ভোক্তার কাছে কৃষিপণ্য পৌঁছানোর বাজারব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব এবং পথে চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে প্রতিটি কৃষিপণ্যের দাম সহনীয় রাখা সম্ভব হতো। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সে দিকে খেয়াল আছে বলে মনে হয় না। থাকলে দিনের পর দিন এভাবে চলতে পারত না। সব দেখেশুনে এ কথা বলা অযৌক্তিক নয় যে, দেশে প্রচলিত কৃষিপণ্যের বাজারব্যবস্থাপনা কৃষক ও ভোক্তাবান্ধব নয়। ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহে কমতি না থাকলেও দাম থাকে আকাশছোঁয়া।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
আইনজীবী হত্যায় উত্তাল চট্টগ্রাম জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ড. ইউনূস বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিভক্ত না হতে মাহাথিরের আহ্বান ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর তিন মাস পার হলেই সব ঋণ খেলাপি মিয়ানমারের জেনারেল মিন অংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইলেন আইসিসির প্রসিকিউটর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন : ফখরুল আইনজীবীর হত্যাকারী ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক’ শুভ কান্তি দাস কে? এশিয়া ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড পেল অধিকার চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ

সকল