দরকার প্রতিটি হত্যার তদন্ত
- ০৯ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র্র বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর দেয়া এ নিষেধাজ্ঞায় আরও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে সাত শীর্ষ কর্মকর্তা। বাংলাদেশে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু হত্যার শিকার পরিবারগুলো কোন প্রতিকার পায়নি। দেশি-বিদেশী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের সতর্কীকরণ ও পরামর্শে সরকার কান পাতেনি। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে এসেছে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এ নিষেধাজ্ঞা উঠাতে হলে একই ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ উত্থাপিত অভিযোগের সুরাহা হতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। অথচ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ সরকার অনেকটাই চাপাচাপি করছেন এটি প্রত্যাহারের জন্য। তাদের সব চেষ্টা বিফল হলেও তা বন্ধ হয়নি। এখন তারা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জোরালো দেন-দরবার করে যাচ্ছেন।
ওয়াশিংটনে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র্র অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপে অংশ গ্রহণের পর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের জানান, র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে যুক্তরাষ্ট্র ভুল সংশোধনের উপায় হিসেবে দেখছে। নির্বাহী আদেশে এটি প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।
২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের ঘটনায় আদালত ১৬ র্যাব সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন অপহরণ ও খুনের দায়ে। এ অবস্থায় গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা সরকার অস্বীকার করলেও তা কোনোভাবেই ধোপে টেকে না। সরকার বলেছে, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তথ্য ভুল হলে সরকারের দায়িত্ব সঠিক তথ্য সরবরাহ করা। সেটা তারা এরই মধ্যে করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো খতিয়ে দেখবে বলেছে।
গণতান্ত্রিক সমাজে রাষ্ট্রের বিধিবদ্ধ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি বেআইনি হত্যার অভিযোগও গুরুতর। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসেবে র্যাব ২০০৯ থেকে ২০২১ সালে অন্তত এক হাজার ২৫৫ ব্যক্তিকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করে। একই সময়ে ৬০৫ জন গুমের শিকার হন। এর মধ্যে ১৯০টির সাথে র্যাবের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। নিখোঁজ এসব মানুষের ৮১ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ১৫৪ জন এখনো নিরুদ্দেশ। প্রশ্ন হলো, ২০০৯ সাল থেকে এসব অভিযোগ যখন উত্থাপিত হয়েছে তখন সরকার কী করেছে? একটি ঘটনারও কি তদন্ত হয়েছে?
বিগত একযুগ ধরে বাংলাদেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আইন ভঙ্গের প্রবণতা ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বমুখী। সরকারের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। তবে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতনের বহু ঘটনায় সরকার সুবিধাভোগী। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন বিরোধী দলমতের মানুষের ওপর চড়াও হয়েছে। সাধারণ মানুষও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশ থেকে গুম, বিচারবহির্র্ভূত হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যু বন্ধ হওয়া। এসব অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র শুধু একটি বাহিনী র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সরকারের উচিত ছিল এসব নিয়ে অনেক আগেই তদন্ত কমিশন গঠন। এখনো তার কাজ একটিই; একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা। সেখানে র্যাব পুলিশকে নির্দোষ পেলে ভালো কথা। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার চেয়েও এটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাতে সরকারের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর গত চার মাসে একটিও বিচারবহির্ভূত হত্যা ঘটেনি। গুম খুনের শিকার মানুষের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা তাই আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। আশা করব, সরকার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে আন্তরিক হবে। চিরতরে বন্ধ করা হবে বেআইনি কর্মকাণ্ড।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা