২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দেশে পরিবেশগত বিপর্যয়

হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য

-

গত মাসে দু’টি বৈশ্বিক প্রতিবেদন আমাদের জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের তথ্য দিয়েছে। একটি প্রতিবেদন বলছে, দুই কোটির বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণ বিশ্বের যে কোনো শহর বা মহানগরের চেয়ে বেশি। অপর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের মধ্যে বাস করে ঢাকার বাসিন্দারা। পরিবেশগত এমন বিপর্যয় আমাদের জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াজনিত রোগের প্রকোপ। ডায়রিয়ায় শুধু যে রাজধানী বা এর আশপাশ এলাকার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, এমন নয়। দেশের ৬৪ জেলার সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষিত থাকলে মানুষ ভালো থাকবে। এ জন্য এমন একটি কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেন প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।
এদিকে বসতি ও নগরায়নের চাপ পড়েছে দেশের বনভূমি ও জমির ওপর, অন্যদিকে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ কৃষি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে জমিতে বিপুল পরিমাণে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। সার ও কীটনাশকের অবশেষ যাচ্ছে জলাশয়, খাল-বিল ও নদীতে। বড় বড় শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে মাছ ও জলজ প্রাণীর ওপর। অবৈধভাবে নদী দখল হচ্ছে। সড়ক ও সেতু তৈরি হচ্ছে নদী সঙ্কুুচিত করে। দেশের অনেক নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ নেই। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নদীগুলো বিপদের মুখে।
বন উজাড় হলে মশার উপদ্রব বাড়ে, ফলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। বন উজাড় হলে বিশুদ্ধ বায়ুর পরিমাণ কমে, তাতে শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। একইভাবে বড় বড় সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণের ফলে আশপাশের জলাশয়ের পানি কমে বা দূষিত হয়, বায়ুর মান কমে। এসব শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণও ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
সরকারি হিসাবে দেশে এখন মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি তিন লাখ। নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের পরই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জনঘনত্ব বাংলাদেশে। দেশে এ দ্রুত নগরায়ন অপরিকল্পিত। এতে পরিবেশের ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জনস্বাস্থ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক এক কোটি ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় পরিবেশ বিপর্যয়গত কারণে। পরিবেশগত বিপর্যয়ে মানুষের মৃত্যু আমাদের দেশেও বেশি।
দুশ্চিন্তার বিষয়- পরিবেশগত বিপর্যয়ে পুরনো অনেক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। এমন অবস্থায় দেশে উচ্চ চিকিৎসা ব্যয় এবং অর্থের অভাবে শুধু সুচিকিৎসা নয়, ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। একটি সহযোগী দৈনিকে গতকাল শুক্রবারের প্রধান প্রতিবেদনে ‘ডক্টরস প্ল্যাটফরম ফর পিপলস হেলথ’-এর বরাতে উল্লেøখ করা হয়, প্রতি বছর দেশে ৬৪ লাখ মানুষ শুধু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ-রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। অথচ রোগ প্রতিরোধ, দীর্ঘায়িত জীবন এবং স্বাস্থ্য এ তিনটি বিষয় জনস্বাস্থ্যের মৌলিক উপাদান, যা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হয়। দেশে অপরিকল্পিত উন্নয়নের সুফল মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও টেকসই উন্নয়নে শক্তিশালী জনস্বাস্থ্য যে গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমরা ভুলতে বসেছি।
আমরা মনে করি, উন্নয়নের ক্ষেত্রে মোট দেশজ উৎপাদনের ওপর মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ওই গুরুত্বের কাছে পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য চিন্তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে, এতে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শক্তিশালী জনস্বাস্থ্যের জন্য টেকসই কল্যাণমুখী সমাজ গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়া ছাড়া বিকল্প অন্য কিছু আছে বলে আমরা মনে করি না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আইনজীবী হত্যায় উত্তাল চট্টগ্রাম জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ড. ইউনূস বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিভক্ত না হতে মাহাথিরের আহ্বান ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর তিন মাস পার হলেই সব ঋণ খেলাপি মিয়ানমারের জেনারেল মিন অংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইলেন আইসিসির প্রসিকিউটর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন : ফখরুল আইনজীবীর হত্যাকারী ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক’ শুভ কান্তি দাস কে? এশিয়া ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড পেল অধিকার চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ

সকল