বিশুদ্ধ পানি পেতে আর কতদিন
- ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
ঢাকা ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ। পানির রঙ হলুদ-সবুজ। দীর্ঘ দিন ধরে এ পানি পান করছে রাজধানীর মানুষ। গৃহস্থালির অন্যান্য কাজে তারা তা ব্যবহার করছে। কর্তৃপক্ষ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো ধরনের উন্নতি সাধন করতে পারেনি। অন্য দিকে ওয়াসার বিল ঘন ঘন বাড়ানো হয়। গ্রাহকদের ভুতুড়ে বিলসহ নানাভাবে হয়রানি হতে হয়। একই সময় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বেতনভাতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বেড়েই চলেছে। এর বিপরীতে তাদের কাছে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সবসময় ধোঁয়াশাপূর্ণ উত্তর দিয়ে বিষয়টিকে পাশ কাটাতে চান। স্পষ্টত গ্রাহকদের সাথে কর্তৃপক্ষ একটি প্রতারণায় লিপ্ত হয়েছে। খবর হচ্ছে, রাজধানীতে ডায়রিয়া ও কলেরাসহ নানা পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স আ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত এক সংলাপে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহ করা পানির মান নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, এ পানিতে দুর্গন্ধ রয়েছে। ঢাকার নয়াপল্টনে অবস্থিত তার বাসার পানিতেই তিনি গন্ধ পান বলে জানান। কিন্তু এ পানির ক্ষতিকর দিক নিয়ে তিনি আবার বিপরীত বক্তব্য রাখেন। এ বছর রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। এ ব্যাপারে ওয়াসার দায় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, যেসব এলাকায় ডায়রিয়া রোগী বেশি, এমন ১০টি জায়গার পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই সব পরীক্ষায় কোথাও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া যায়নি। আবার বলেন, তারপরও ডায়রিয়া সংক্রমিত এলাকার পানিতে ক্লোরিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে বলা হয়েছে, যাতে কোনো জীবাণু থাকলে ধ্বংস হয়ে যায়। ওয়াসার ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এমডির এমন বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ওয়াসার পানি স্বচ্ছ নয় ও এতে স্পষ্ট দুর্গন্ধ রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা একই ধরনের পানি ব্যবহারের তথ্য দিচ্ছেন। পানির পাইপ লাইনের সাথে পয়ঃনিষ্কাশন লাইন একাকার হয়ে যাচ্ছে। ফুটা দিয়ে ওয়াসার পানিতে ঢুকে পড়ছে মলমূত্রযুক্ত নোংরা আবর্জনা। ওয়াসার পানিতে ক্ষতিকর জীবাণু নেই- ওয়াসার এমডির এমন দাবি ভিত্তিহীন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
পানির অপর নাম জীবন। বাংলাদেশের মানুষের এই প্রবাদ বাক্যটি বোঝার সুযোগ কমই হয়। কারণ আমাদের চার পাশে পানি আর পানি। চাহিদা সৃষ্টির আগেই আমরা পানি পেয়ে থাকি। তবে রাজধানী ঢাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ থাকলে তখন বিষয়টি উপলব্ধি করা যায়। সামান্য একটু পানি তখন রতেœর চেয়ে দামি মনে হয়। বিশুদ্ধ পরিষ্কার পানি না হলেও সেটিই মানুষ বাধ্য হয়ে ব্যবহার করে। এ সুযোগটাই সম্ভবত ওয়াসা নিচ্ছে। একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়াসা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না।
ঢাকার মানুষের বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ জন্য তারা অর্থ খরচও করে অনেক। নিরাপদ পানি সরবরাহ করা অসম্ভবও নয়। বিশেষ করে পানি শোধন করার জন্য ওয়াসা বড় বড় প্রকল্প নিয়েছে। যেমন ২০২৩ সালের মধ্যে তারা ঢাকাবাসীর জন্য ৭০ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ পানি থেকে শোধন করে সরবরাহ করবে। পানি সরবরাহ লাইনকে নিরাপদ করার জন্য অত টাকা লাগে না। বিগত এক যুগে বড় বড় প্রকল্পের মধ্যে একটা প্রকল্পও যদি এমন নেয়া হতো এতদিনে রাজধানীর সব এলাকায় পান উপযোগী বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যেত। ওয়াসার এমডিকে পরামর্শ দিতে হতো না যে, আপনারা সবাই ফুটিয়ে পান করুন। আসলে এমন পরামর্শ দেয়ার জন্য তাকে ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে অচিরেই ঢাকবাসী জীবাণুমুক্ত দুর্গন্ধমুক্ত পানি পেতে পারে। আশা করা যায়, ঢাকা ওয়াসার বোধোদয় হবে; তারা গ্রাহকদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা