২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ঠাঁই নেই সুকো বিবির

বিশাল পৃথিবী কেন সঙ্কীর্ণ হলো?

-

সহযোগী একটি জাতীয় দৈনিক জানায়, কুড়িগ্রামের মতো হতদরিদ্র অধ্যুষিত এলাকায় বসবাসকারী, সুকো বিবির স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই। এক দশক পরের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে, কায়ক্লেশে দিন যাপনের গ্লানি বহন করছেন সুকো বিবি। যে দিন যার বাড়িতে কাজ, সেখানেই ‘রাত আর সেখানেই কাৎ’। অর্থাৎ রাত যাপন। তার জন্য এখন জরুরি হচ্ছে একটি সরকারি ঘর, যাতে তার মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলতে পারে। কিন্তু কে দেবেন সে ঘর? বিত্তহীন সুকো বিবি কি কোনোদিন পাবেন না একটি ঘর? তার মানবিক অধিকার আর মর্যাদার কি কেউ সামান্য গুরুত্ব দেবেন?
জানা যায়, উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সাতভিটা নামক গাঁয়ের টেপু শেখের কন্যার নাম সুকো বিবি। তার বিয়ে হলেও কপাল ভারি মন্দ। কেননা, অল্প কিছুদিন পরই স্বামী তাকে পরিত্যাগ করে চলে যান চিরতরে। তাই সুকো বিবি পিতার গৃহে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হন। কিন্তু বিধিবাম! কারণ সেখানে ঠাঁই হয়নি তার। ফলে বোনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কিন্তু সেখানেও সুকোর ঠাঁই হচ্ছে না। অতএব, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে অন্যের ঘরে রাত কাটাতে হয় তাকে।
কবি বলেছেন ‘বিপুলা এ পৃথ্বি’; তবুও দরিদ্র ও ভিটিহীন সুকো বিবির জন্য এতটুকু জায়গা নেই কেন? এ যেন ইংরেজ কবি স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের ‘রাইম অর অ্যান অ্যানশিয়েন্ট মেরিনার’ (একজন প্রবীণ নাবিকের ছড়া) শীর্ষক কবিতার ‘ডধঃবৎ, ডধঃবৎ বাবৎুযিবৎব; হড়ঃ ধ ফৎড়ঢ় ঃড় ফৎরহশ’ (সর্বত্রই পানি, তবে এর একটি ফোঁটাও খাওয়া যায় না) পঙ্ক্তির বাস্তব রূপ।
সুকো বিবি বলেছেন, ‘বয়স প্রায় ৭৫ বছর হলো আমার। আর ক’দিন বাঁচব? এখন রাতে একটু শান্তির মাঝে ঘুমাতে চাই। আমার বাড়িঘর, জমি-জায়গা কোনো কিছুই নেই। শুনলাম, সরকার দেশের গরিবদের জন্য ঘর বানিয়ে দিচ্ছে। তাই জীবনের শেষ ক’টা দিন একটি কুঁড়েঘরে হলেও কাটাতে চাচ্ছি। এ জন্য আমার দরকার একটা সরকারি ঘরের বরাদ্দ।’
স্থানীয় লোকজনেরও কথা, ‘সুকোর কিছুই নেই। বিত্তহীন মানুষটি অত্যন্ত নিরুপায়। তাই সরকারের উচিত তাকে একটি ঘর দেয়া।’ স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, “আগে সুকো বিবির ব্যাপারটি জানা ছিল না। এখন খোঁজ নিয়ে ‘যতটা সম্ভব’ তাকে সাহায্য করব।” সত্যিই কি বৃদ্ধা সুকোর স্বপ্ন পূর্ণ হবে? হলে তা কতদিনে, তা কিন্তু নিশ্চিতভাবে জানা গেল না।
দীনদরিদ্র সুকো বিবির জন্য অবিলম্বে একটি ঘরের ব্যবস্থা করার দাবি আমরাও জানাই।


আরো সংবাদ



premium cement