২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দিন দিন নামছে পানির স্তর; বাড়ছে সঙ্কট

জনগণের দুর্ভোগের অবসান কাম্য

-

বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থিত, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা পৌরসভাসহ এ উপজেলার সব ইউনিয়নেই ভূগর্ভের পানি আরো নেমে যাওয়ার দরুন বেশির ভাগ নলকূপ অচল হয়ে পড়েছে। এতে মানুষের চরম দুর্ভোগ ঘটছে। এ অবস্থায় ভালুকা পৌরসভার আওতাধীন এলাকাসমেত অত্র উপজেলার প্রায় সব গ্রামে মোটরচালিত সাবমার্সিবল পাম্পের ব্যবহার বেড়েছে। তাই কমে যাচ্ছে গতানুগতিক চাপকলের প্রচলন। চলমান চৈত্র মাসের অসহ খরতাপে খালবিল, নদীনালা প্রায় শুকিয়ে গেছে। এ কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে অধিকাংশ সাবমার্সিবল পানির পাম্পের মোটরও নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এগুলো আর পানি তুলতে পারছে না। একটি জাতীয় পত্রিকার ভালুকা প্রতিনিধির পাঠানো খবরে এ কথা জানা যায়।
জানা গেছে, উদ্ভূত সমস্যা সারিয়ে নিতে ভুক্তভোগী লোকজন টিউবওয়েল বিক্রেতার বিপণিতে এবং সংশ্লিষ্ট মিস্ত্রিদের কাছে ভিড় জমাচ্ছেন। অন্য দিকে যথাসময়ে মিস্ত্রি না পেয়ে অনেকে পানির বিষম সঙ্কটে পড়েছেন। ভালুকা পৌর এলাকায় বিভিন্ন বাসায় স্থাপিত, চাপকলগুলো পানির অভাবে বিগত কয়েক বছরে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বেড়ে গেছে ভূগর্ভের গভীরে সংস্থাপিত সাবমার্সিবল টিউবওয়েলের সংখ্যার প্রচলন। এ দিকে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অন্যতম প্রধান ফসল, বোরো ধানক্ষেতে সেচের পানির প্রাপ্যতা নিয়ে কৃষিজীবীদের উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অপর দিকে মিস্ত্রিরা জানান, ‘ভালুকা পৌর এলাকায় কয়েক স্থানে ভূগর্ভের পানি এবার শুকনা মৌসুমে অন্তত ৫০-৬০ ফুট নেমে গেছে। তাই আর সাবমার্সিবল পানির পাম্পেও কাজ হচ্ছে না। এ সমস্যা নিরসনে মিস্ত্রিরা দিনরাত ঘটনাস্থলে কাজ করে যাচ্ছেন। এসব কলে স্থান ভেদে ১০ থেকে ১৫ ফুট লম্বা পাইপ লাগিয়ে ভূগর্ভের পানির স্তরে স্থাপন করে তারপর কোনোমতে পানি তুলতে হচ্ছে। আর যে চাপকলগুলোতে ‘হাউজিং’ করে ভূপৃষ্ঠের অর্ধশত ফুট নিচে পিস্টন বাকেট বসিয়ে নেয়া হয়, কেবল সেসব কলেই পানি উঠানো সম্ভব হচ্ছে। কল-মিস্ত্রিদের কথা, যদিও খরায় প্রত্যেক বছর কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তা এবারকার প্রচণ্ড কাজের মতো কখনো তাদের ওপর চাপ ফেলেনি। কারণ কয়েক বছরেও মাটির এত বেশি নিচে পানি নেমে যায়নি। শিগগিরই বৃষ্টি না হলে তা আরো নামার আশঙ্কা রয়েছে। তখন এলাকায় পানির অভাব আরো বাড়বে।
ভালুকা পৌর এলাকায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একজন অধিবাসী জানালেন, তার সাবমার্সিবল পানির কলটি কয়েক বছর ধরে সার্ভিস দিচ্ছিল। এবার হঠাৎ তা অচল হয়ে যায়। এ প্রতিবেদন পাঠানো পর্যন্ত এটা সারাতে মিস্ত্রি পাওয়া যায়নি। তাই মেরামত করাও সম্ভব হয়নি। প্রতিবেশীদের প্রায় সব পানির কলও বন্ধ। এলাকাবাসীর বক্তব্য, ভালুকায় প্রায় ৮০ শতাংশ টিউবওয়েলের একই সমস্যা। পানির স্তর যত নামছে, পানি তুলতে তত বেশি বিঘœ ঘটছে। একজন দোকানি জানান, মাটির ৮০-৯০ ফুট নিচে মোটর না বসালে পানির নিশ্চয়তা নেই। জানা যায়, গত অল্প কয়েক দিনেই অন্তত দুই হাজার বিকল সাবমার্সিবল পাম্প মেরামত করতে হয়েছে এখানে। অনেকের মতে, কয়েক বছরে শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভের পানি নেমে গেলেও সঙ্কট এতটা তীব্র হয়নি। এবার পানি বেশি নিচে নেমে গেছে। এ জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয় দায়ী। আইন না মেনে কৃষিজমি ও জলাশয় ভরাট করে নির্বিচারে কলকারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। ভালুকা ও পাশের কয়েক গাঁয়ে শতাধিক বৃহৎ কারখানায় গভীর নলকূপ দিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। স্থানীয় কয়েক শ’ মৎস্য খামারেও দিনরাত ভূগর্ভের পানি তোলা হচ্ছে। তদুপরি, বিশেষ করে বোরো ধানক্ষেতে সেচ দিতে হয়। এ অবস্থায় সঙ্কট আরো বাড়ছে। গরিবের পক্ষে ৩০-৪০ হাজার টাকা দিয়ে একটা পানির কল বসানো অসম্ভব। তারা এমনকি, খাবার পানিও পায় না। অতীতে ভূগর্ভে মাত্র ১৫-২০ ফুট নিচেই পানি মিলত। এ ছাড়া নির্বিচারে গাছ কাটায় তাপদাহ বাড়ছে ছায়াহীন মাটিতে।
আমাদের দাবি, অবিলম্বে জনদুর্ভোগের অবসান ঘটাতে কার্যকর ও স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement