সুশাসনহীন উন্নয়নের ফাঁদ
- ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
সুশাসন ও উন্নয়ন পরস্পর পরিপূরক। বিচারহীনতা, দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলায় সাময়িক উন্নয়নের চ্ছটা দেখা যেতে পারে। তবে সুশাসন না থাকলে তা যেকোনো পর্যায়ে ভেঙে পড়তে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায় সে লক্ষণ এখন দৃশ্যমান। দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অবস্থা এতটাই করুণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতিতে জরুরি পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। তবে নিকট অতীতে পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উন্নতি ‘ইস্ট এশিয়ান মিরাকল’ নাম দেয়া হয়েছে। এসব দেশের ধারাবাহিক উন্নতির পেছনে দর্শন ছিল সুশাসন। এসব বিষয়ে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষণীয় রয়েছে।
গণমাধ্যমের খবর, জ্বালানি তেলের ঘাটতিতে শ্রীলঙ্কায় পরিবহন-ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ। একই কারণে দৈনিক ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। এমনকি হাসপাতালের জরুরি অস্ত্রোপচারও অনেকসময় করা যাচ্ছে না। মানুষ প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। চলতি মাসে দেশটিতে ১৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি খাদ্যপণ্যেÑ ৩০ শতাংশ। তেল ও বিদ্যুৎ সঙ্কট চক্রাকারে পুরো অর্থনীতি স্থবির করে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ শাসক পরিবারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। রাজধানী কলম্বোয় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। জনসাধারণ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বাড়িতে হামলা করছে। ডিম ছুড়ে আইনপ্রণেতাদের প্রতি ঘৃণা জানাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর একটি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বিক্ষোভকারীরা বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার ও জনগণ সেখানে মুখোমুখি। অনেক জায়গায় মানুষ সরকারি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মানছে না। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে।
শ্রীলঙ্কা গৃহযুদ্ধের মতো বড় সঙ্কট মোকাবেলা করেছে দীর্ঘ দিন। দেশটি ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছে থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর তাদের এত বড় বিপদ কখনো মোকাবেলা করতে হয়নি। স্থানীয় সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে, দেশটির অর্থনৈতিক অচলাবস্থা বেজায় খারাপের পেছনে রয়েছে দেশটির পারিবারিক শাসনের আড়ালে উন্নয়নের ফানুস। বড় বড় প্রকল্প এর মধ্যে ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু এসব প্রকল্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে কমই ভাবা হয়েছে। এসব প্রকল্প গ্রহণে সামগ্রিক কল্যাণ আর টেকসই উন্নয়নের চেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে কমিশন-বাণিজ্য। ক্ষমতাসীন পরিবারের সদস্যরা প্রকল্পগুলো থেকে আলাদা পার্সেন্টেজ নিয়ে পাচার করেছেন। রাজাপাকসের বড় ছেলে বর্তমানে ক্ষমতার অন্যতম ভাগিদার। তার বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের অর্থপাচারের অভিযোগ উঠেছে। কিছু দেশে চীন এমন প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। দেশটি বাজেট ছাড়ের ব্যাপারে উদারহস্ত। এর মাধ্যমে মূলত শাসকশ্রেণীর মধ্যে দুর্নীতিবাজ একটি চক্র গড়ে ওঠে। চীনকে এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ভাবতে হবে। তা না হলে শেষ পর্যন্ত এগুলো বেইজিংয়ের জন্যও এ অঞ্চলে ভালো ফল বয়ে আনবে না।
বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প নেয়ার পরই শ্রীলঙ্কা বেসামাল হতে থাকে। ২০১৯ সালের শেষে দেশটির বিদেশী ঋণের পরিমাণ ছিল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ৯৪ শতাংশ। ২০২১ সালে তা জিডিপিকে ছাড়িয়ে ১১৯ শতাংশে পৌঁছে যায়। এর মধ্যে বিদেশী বিশেষত চীন থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ বাড়ছে। চলতি বছরের মধ্যে সুদাসল বাবদ দেশটিকে ৬৯০ কোটি ডলার শোধ করতে হবে। অথচ দেশটির কাছে এখন মাত্র ২৩১ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার রয়েছে। নিয়মিত বাণিজ্যের লেনদেনও তা দিয়ে এখন করতে পারছে না তারা। বন্দরে এসে থাকা জাহাজভর্তি তেলও ডলারের অভাবে খালাস করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিকে অচিরেই দেউলিয়া ঘোষণা করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিচ্ছেন। উন্নয়ন প্রকল্প মানেই যে জনসাধারণের উন্নয়ন নয়; বরং উল্টো বোঝাও হয়ে উঠতে পারে শ্রীলঙ্কা আমাদের সামনে এর একটি দৃষ্টান্ত। এ থেকে আমরা যদি শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হতে না পারি তাহলে এমন পরিস্থিতির মুখে আমরাও পড়তে পারি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা