২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অপরাধে জড়াচ্ছেন সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা

আইনের সমান প্রয়োগ কাম্য

-

 

দীর্ঘ দিন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় ক্ষমতার দাপটে সরকারদলীয় অনেক নেতাকর্মী এমন সব কাজে জড়িয়ে পড়েছেন যা দলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায়ই। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা সদরে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সব কাজেই কোনো-না-কোনোভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ বা ছাত্রলীগের কিছ নেতাকর্মী জড়িত। তারা নিজেদের স্বার্থ ধরে রাখতে তৎপর। আবার তাদের প্রতিপক্ষও সক্রিয়। ফলে শুরু হয় দ্বন্দ্ব ও তা থেকে মারামারি, খুনোখুনি পর্যন্ত। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন সারা দেশে। অনেকের নামে খুনের মামলা হয়েছে। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বে থাকা অনেক নেতার বিরুদ্ধে উঠেছে অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ।
সর্বশেষ মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও নিরীহ পথচারী প্রীতি হত্যার ঘটনায় নাম এসেছে নিজ দলের নেতাদেরই। টিপু হত্যায় জড়িত সন্দেহে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। ২০১৬ সালে তিনি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরই মতিঝিল কলোনি এলাকায় নিহত হন তারই বন্ধু ‘বোচা বাবু’। সেই হত্যার ঘটনায় ওমর ফারুকসহ আরো অনেকের নাম ছিল; কিন্তু পরে চার্জশিট থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। খুনের মামলায় বিচারাধীন আসামি হয়েও এতদিন নেতৃত্বে বহাল ছিলেন ফারুক। টিপু হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ার পর দল তাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে।
র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কীকে গুলি করে হত্যার মামলায় জাহিদুল ইসলাম টিপু আসামি ছিলেন। পরে বিচারিক কার্যক্রমে মামলা থেকে টিপুর নাম বাদ পড়লে গ্রেফতার ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ হন। সেই থেকে তাকে হত্যার ফন্দি আঁটা শুরু হয়। র্যাব বলেছে, মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তিবাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়েও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এসব দ্বন্দ্ব থেকেই ১৫ লাখ টাকার চুক্তিতে টিপুকে হত্যা করা হয়। ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি পরিচয়দানকারী মারুফ রেজা সাগরের বিরুদ্ধেও রয়েছে খুনসহ বহু অভিযোগ। সাগর ছিলেন গাড়িচালক। যুবলীগের যে নেতা তাকে চালকের পদে চাকরি দিয়েছিলেন তাকেই খুন করার অভিযোগে অভিযুক্ত সাগর। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
মূলত অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়ার দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। গ্রেফতার হলে কাউকে শুধু দল থেকে বহিষ্কার করা হয়; কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে পুলিশের অভিযোগপত্র থেকে অভিযুক্ত নেতার নাম বাদ দিতে প্রভাব খাটানো হয় বলে শোনা যায়। এর ফলে তারা নেতৃত্বে থেকে যান। সাত খুন মাফের প্রবাদবাক্য বাস্তবেই সত্য হয়ে ওঠে। আর অপরাধী নেতারা হয়ে ওঠেন আরো বেপরোয়া। অভিযুক্তদের প্রতি এই আনুকূল্য দলের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠছে।
সারা দেশের পরিস্থিতির দিকে তাকালেও দেখা যাবে একই চিত্র। মাদক কারবার, অর্থপাচার, আদমপাচার, অর্থ-আত্মসাৎ, ভূমি দখল, নদী দখলসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যার সাথে জড়িয়ে পড়েননি অনেক নেতাকর্মী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো মামলা মোকদ্দমা হয় না। গণমাধ্যমে যৎসামান্য প্রকাশ পেলেও তাতে কাজ হয় না। এমনকি আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিরাও সরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। প্রকাশ্যে না বললেও, দলের সব স্তরের নেতাকর্মীর মধ্যেই এমন আলোচনা চলে যে, এ বিষয়গুলো দলের জন্য নেতিবাচক উদাহরণ হয়ে থাকবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement