২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
থেমে নেই মানব পাচার

জোরালো আইন প্রয়োগ দরকার

-

মানব পাচার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকি বাড়লেও থেমে নেই পাচারকারীরা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির বরাতে গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, আগে যত অভিযোগ পাওয়া যেত, তুলনায় এখন অভিযোগ কিছুটা কমেছে। কিন্তু পাচার কমেছে এটা বলার সুযোগ নেই। পাচারকারীরা দালালের মাধ্যমে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করে থাকে; যেখানে অভিবাসন প্রত্যাশী অনেকের বয়স বেশি দেখানো হয়। বিদেশে গিয়ে কাজ করে ধনী হওয়ার বিষয়ে প্রলুব্ধ করা হয় তাদের। বলা হয়, সেখানে কাজ করে অল্প সময়ে বেশি আয় করার সুযোগ রয়েছে। দুর্দশা, নির্যাতন, নিপীড়ন বা ঝুঁকি সম্পর্কে তাদের কিছু জানানো হয় না। সহজ সরল মানুষদের পাচারকারীরা এভাবে ফাঁদে আটকায়। ফলে উন্নত বিশ্বে অবৈধভাবে যেতে গিয়ে আমাদের দেশের তরুণরা ভয়াবহ বিপদে পড়ছে।
সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, দেশের অন্তত ১৫ জেলায় মানব পাচারের জাল বিস্তৃত। তারা ১৮টি রুটে মানব পাচার করছে। শুধু লিবিয়ায় মানব পাচারের সাথে ১৪ চক্রের ৩ শতাধিক ব্যক্তি জড়িত। প্রতিটি চক্রে অন্তত ২৫ জন করে সদস্য সক্রিয় আছে। লিবিয়ায় ২০২০ সালে পাচার হওয়া ২৬ বাংলাদেশী নির্মম নির্যাতনে নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে এক বাংলাদেশীর দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথায় ভয়াবহ এসব তথ্য বের হয়ে এসেছে।
সাগরপথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টাকারীদের মধ্যে বিশ্বে বাংলাদেশীরা এখন তালিকার শীর্ষ দিকে অবস্থান করছেন। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি জানিয়েছে, অবৈধ পথে ইউরোপে প্রবেশকারীদের বেশির ভাগই ২৫-৪০ বছরের। ইউরোপ ও লিবিয়া থেকে ফেরত আসা দুই হাজার ২৮৪ জনের সাক্ষাৎকারে জানা গেছে, তারা জনপ্রতি তিন থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন বিদেশযাত্রায়। ইউরোপে প্রবেশের আশায় বলকানের বরফঢাকা জঙ্গলে উচ্চ মৃত্যুঝুঁকি নিচ্ছে এ দেশের তরুণরা। গত আট বছরে ইউরোপের উদ্দেশে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন ২০ লাখের বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে ১৯ হাজারের বেশি মানুষ ডুবে মারা গেছেন। এ তালিকার শীর্ষ দশে আছে বাংলাদেশের নাম। জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে মানব পাচার সম্পর্কে এ ধরনের তথ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর মধ্যেও পাচারকারীরা থেমে নেই। তাদের অপতৎপরতায় লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। ভারতে নারী পাচারের রয়েছে আরেকটি বড় চক্র।
আমরা মনে করি, দেশে তরুণদের কাক্সিক্ষত কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে পারলে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব। একই সাথে মানব পাচারের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থা নেয়া উচিত। দোষীদের আইনের আওতায় এসে বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করায় অপরাধ দমনে ওই বাহিনীকে খুব কার্যকর করা যাচ্ছে না। যদিও ভিন্নমত দমনের চেয়ে অপরাধীদের রুখতে সরকারের বেশি মনোযোগী হওয়া জরুরি ।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল