ব্যস্ত বন্দরের কার্যক্রমে বাধা
- ৩০ মার্চ ২০২২, ০০:০০
যশোরের বেনাপোল ব্যস্ততম স্থলবন্দর। প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে হাজার হাজার টন পণ্য আমদানি-রফতানি হয় বাংলাদেশের। প্রধানত ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য এ বন্দর দিয়ে দেশে আসে। এ বন্দরের পণ্য খালাস কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলে বাজারে এর প্রভাব পড়ে। মানুষ এ পয়েন্ট দিয়ে নিয়মিত ভারতে আসা-যাওয়া করে। বন্দরটির কার্যক্রম নিরুপদ্রব করার চেষ্টা সেভাবে দেখা যায় না। বরং এই গুরুত্বপূর্ণ বন্দর চালানোর ক্ষেত্রে উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। সে জন্য মাশুল গুনতে হয় ব্যবসায়ী ও যাত্রীদেরও।
খবরে জানা যাচ্ছে, গত সোমবার শ্রমিকদের বিবদমান দু’গ্রুপের মধ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ফলে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সারা দেশে ক্ষমতাসীনদের দখল ও নিয়ন্ত্রণের যে নগ্ন প্রচেষ্টা দেখা যায় বেনাপোল বন্দরেও সেটি দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেনাপোল পৌর মেয়রের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। মেয়র লিটন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। জানা যাচ্ছে, বন্দরের বর্তমান নিয়ন্ত্রণ সংসদ সদস্যের আশীর্বাদপুষ্টদের হাতে। এর সভাপতি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রাজু আহম্মেদ এবং সম্পাদক অহিদুজ্জামান। সম্পাদক আবার উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। তিনি জেলা পরিষদেরও সদস্য। বন্দরের কর্তৃত্ব দখল করার জন্য মেয়রের সমর্থকরা এই গ্রুপের ওপর হামলা চালায়।
জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে হামলার সূত্রপাত হয়। মেয়রের সমর্থক বহিরাগতরা ককটেল চার্জ করে আক্রমণের সূচনা করে। তারা এ সময় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। অন্য দিকে প্রতিপক্ষ লাঠিসোটা নিয়ে তাদের সশস্ত্র প্রতিরোধ করে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়। এ সময় তিন ঘণ্টা বন্দরের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অন্য দিকে সারা দিন পণ্য ওঠানামা বন্ধ ছিল এ কারণে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অন্য দিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত হয়ে গেছেন। মেয়রের দাবি- ‘তিন বছর আগে অহিদুজ্জামান বোমাবাজি করে অবৈধভাবে শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করেছেন। এরপর তিনি জোর করে সাধারণ শ্রমিকদের সদস্যপদ থেকে বাদ দিতে শুরু করেন।’ অপরপক্ষ থেকে একই ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে। এ ঘটনার জের ধরে প্রতিপক্ষের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও হামলা হয়েছে। তাতে সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি ও আরো হতাহত হচ্ছে।
এ চিত্রটি আজ সারা দেশে। যেখানেই ক্ষমতা অর্থ ও প্রতিপত্তির ব্যাপার আছে ক্ষমতাসীনরা সেখানেই বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে এর দখল নিয়ে সন্ত্রাস করছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে এসবের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেই। কেবল পেশিশক্তি যাদের বেশি তারাই সবকিছুর মালিক হয়ে যাচ্ছে। অফিস আদালত হাট বাজার স্টেশন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব জায়গায় একই প্রবণতা। সবকিছু তারা নিজেদের একান্ত সম্পত্তি বানিয়ে নিতে চাচ্ছে।
সরকারি লোকদের দখলবাজির বাইরেই রাখা দরকার ছিল বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গাকে। বেনাপোলে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আলামত দেখা গেছে। সময়মতো আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে এভাবে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হতো না। বেনাপোলের মতো বন্দর নিয়ে সরকারের যে সর্বোচ্চ নজর নেই, সেটি আরো আগেও দেখা গেছে। অবহেলা বা উদাসীনতার কারণে বারবার বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে, বাধার সৃষ্টি হয়েছে। এর কার্যক্রম কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ হলেও বড় যানজট লেগে যায়। বিশেষ করে খালাসের অপেক্ষায় থাকা শত শত ট্রাক ও এর ভেতর থাকা পণ্য ও এর মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভারতীয় অংশ, পেট্রাপোলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেই দেশের ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কোনো সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড দেখা যায় না। এই ক্ষেত্রে সেই দেশের সরকার সতর্ক বলে মনে হচ্ছে। আমরা আশা করব, শুধু বেনাপোল নয়; এ ধরনের সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টকে সরকার দলীয়করণমুক্ত রাখবে এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডকে মসৃণভাবে চলার সুযোগ করে দেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা