ছুটছে অধোগতির ধারায়
- ২৯ মার্চ ২০২২, ০০:০০
বাংলাদেশের ছুটে চলার গতি সত্যিই অপ্রতিরোধ্য। এমনভাবে ছুটছে যে, ক্রেন দিয়ে টেনেও থামানো যাবে বলে মনে হয় না। জীবনে গতি থাকা খুব দরকার। গতি না থাকলে জীবন স্থবির হয়ে পড়ে যা মৃত্যুরই শামিল। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি সত্য। কারণ, রাষ্ট্র মানে কোটি কোটি মানুষের জীবন। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ১৮ কোটি জীবন জড়িত। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ যে ছুটছে, সেই ছুটে চলাটা কোন দিকে? সামনের দিকে নাকি পেছনে?
আমরা দেখছি, বৈশ্বিক নানা প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ প্রায়ই শীর্ষস্থান দখল করছে। কিন্তু সেটি অগ্রগতির ধারায় নয়, অধোগতির ধারায়। গত সপ্তাহে বায়ুদূষণে সবচেয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ ও রাজধানী শহর ঢাকা। এক সপ্তাহ না পেরুতে জানা গেল, শব্দদূষণেও বিশ্বের এক নম্বর স্থানে রয়েছে আমাদের রাজধানী শহর ঢাকা। জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনএপি) প্রতিবেদনে জানাচ্ছে এ তথ্য। দ্বিতীয় স্থানে ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুরাদাবাদ আর তৃতীয় পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় শহর যেটিকে অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি বলে এত দিন জানা ছিল সেই রাজশাহীর অবস্থান চতুর্থ স্থানে।
অধোগতিরও একটা সীমা থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো সীমার মধ্যে পড়ে না। এক্ষেত্রেও অনন্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী শহরের আবাসিক এলাকার জন্য অনুমতিযোগ্য শব্দসীমা যেখানে ৫৫ ডেসিবেল সেখানে ঢাকায় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবেল। রাজশাহীতে ১০৩ ডেসিবেল। অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য সীমার ধারে কাছে নেই বাংলাদেশ।
শব্দদূষণের প্রধান উৎস সড়কে যানজটকালে যানবাহনের শব্দ, বিমান, রেল, শিল্পকারখানা ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট শব্দ। এসব শব্দ গ্রহণযোগ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তা মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ঢাকাসহ সারা দেশে শব্দদূষণ বাড়ছে। যানজটের সময় চারপাশ থেকে হর্ন বাজানো শুরু হয়। বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনার নির্মাণকাজের শব্দ, বিকট শব্দে মাইক বাজানো, কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে এমপ্লিফায়ার লাগিয়ে গান বাজানোও শব্দদূষণে ভূমিকা রাখছে। বৈজ্ঞানিক তথ্যানুযায়ী, শব্দের মাত্রা ৮৫ ডেসিবেল বা তার বেশি হলে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। উচ্চশব্দে মানুষ বধির হতে পারে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ ও উদ্বেগজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সব বয়সের মানুষেরই ক্ষতি হলেও বিশেষভাবে ক্ষতি হতে পারে শিশুদের। তাদের মনোযোগ দেয়ার ও পড়া আত্মস্থ করার ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। বিশ্বের কয়েকটি বড় শহরে শব্দদূষণের কারণে সৃষ্ট সমস্যার চিত্রও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, শব্দদূষণের কারণে কানাডার টরন্টো শহরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ শতাংশ ও উচ্চরক্তচাপের রোগীর সংখ্যা ২ শতাংশ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে কানাডা বা অন্য কোনো উন্নত দেশের উদাহরণের বিকল্প নেই। আমাদের মতো দেশে যেখানে গুম, খুনেরই সঠিক হিসাব থাকে না সেখানে শব্দদূষণের প্রভাবে কতজন অসুস্থ হলো তার হিসাব কে রাখে!
দেশে আইন-কানুন, বিধিমালার কোনো শেষ নেই। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণেও বিধিবিধান তৈরি করা হয় সেই ২০০৬ সালে। তাতে শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে শাস্তির কথা আছে। তবে বিধি অনুযায়ী কারো বিরুদ্ধে কখনো কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত স্যাটেলাইট দিয়েও খুঁজে পাওয়া দুরূহ। সমাজের অন্য সব বিষয় যেভাবে চলছে পরিবেশসম্পর্কিত বিষয়গুলোও এর বাইরে নয়।
গত এক যুগে দেশে এমন সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে যে, বিশেষ কিছু সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের অনুকূলে এবং অপছন্দের জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই শুধু আইনের প্রয়োগ হবে। প্রত্যেক নাগরিকের ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ যে সমভাবে হবে না এটাই এখন দেশবাসীর কপালের লিখন বলে সবাই যেন মেনে নিয়েছেন। পরিবেশগত সমস্যা, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, নদীদূষণের বিষয়গুলোও এভাবেই বিবেচনায় নিলে আর কোনো ঝামেলা থাকে না!
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা