যাত্রীরা কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত
- ২৮ মার্চ ২০২২, ০০:০০
সরকারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ে নিয়ে ভালো খবর পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। নতুন বগি ও ইঞ্জিন ক্রয়সহ রেলপথ সংস্কারের কিছু উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের কথা শোনা যায়। পরে দেখা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের চেয়ে এ নিয়ে ঘাপলার খবর বেশি। রেল বিভাগ ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে নিয়োগ জালিয়াতির কারণে। রেলের ‘কালো বিড়াল’ দুর্নীতির প্রতীকী চিত্র হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে রয়েছে। উন্নয়ন ও যাত্রীসেবা দিয়ে লাভজনক হয়ে উঠছে বিশ্বে অন্যান্য দেশের রেল যোগাযোগব্যবস্থা। কিন্তু বাংলাদেশে রেল বিভাগে প্রতি বছর লোকসানের পরিমাণ যে বাড়ছে সে খবর সবার জানা। রেলে আরেকটি বড় ভোগান্তি হচ্ছে টিকিট ব্যবস্থাপনা। এটি এখনো সহজ ও মসৃণ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
খবরে জানা যাচ্ছে, রেলের অনলাইনে টিকিট বিক্রির দায়িত্ব চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পায় সহজ ডটকম নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির অধীনে গত শনিবার সকালে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ওয়েবসাইটটি অকার্যকর হয়ে যায়। পুরো দিন সেটি বন্ধ ছিল। এ জন্য রেলস্টেশনে ভিড় বাড়ে। রেলের যাত্রীদের পুরনো ভোগান্তি এ দিন নতুন মাত্রা পায়। রাজধানীর কমলাপুর, বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামসহ বড় রেলস্টেশনগুলোতে টিকিট সংগ্রহকারীদের বাড়তি চাপে মানুষজন হয়রানির শিকার হয়। অথচ নতুন প্রতিষ্ঠানের কাছে অনলাইন টিকিট বিক্রি হস্তান্তরের সুবিধার্থে ২০-২৫ মার্চ পর্যন্ত অনলাইন, অ্যাপ ও কম্পিউটারে প্রিন্ট করা টিকিট বিক্রি বন্ধ ছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কৃতিত্ব সরকার জোরেশোরে দাবি করে থাকে। এ জন্য পূর্ণ রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চায়। রেলের টিকিট বিক্রি নিয়ে কর্তৃপক্ষের ঢিলেমি প্রমাণ করে সরকার এ নিয়ে আসলে আন্তরিক নয়।
বছরে রেলে গড়ে ১০ কোটি টিকিট বিক্রি হয়। এর মধ্যে প্রায় আট কোটি টিকিট কম্পিউটার প্রিন্ট করা, যার অর্ধেক বিক্রি হয় অনলাইনে ও মোবাইল অ্যাপে। হিসাব মতে, টিকিট বিক্রি পুরোটাই ডিজিটাল হওয়ার কথা। বাস্তবে সামান্যই ডিজিটাল করা গেছে। সেই সুবিধাও মসৃণভাবে চালাতে পারছে না। অনলাইন টিকিট বিক্রি ভণ্ডুল হওয়ার জন্য অনলাইন কোম্পানি পরস্পরকে দোষারোপ করছে। সহজের দাবি, সেবা দেয়ার আগের প্রতিষ্ঠানটি সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সময়মতো বুঝিয়ে দেয়নি। কারণ হিসেবে আরো বলছেÑ একসাথে বহু ক্রেতা চেষ্টা করায় সার্ভারে সমস্যা দেখা দেয়। অথচ প্রস্তুতি নিতে প্রষ্ঠিানটিকে যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ কাজের ক্ষেত্রে গাফিলতি করেছে তা স্পষ্ট। অনলাইন কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিকতা পায়নি; বরং রেল কর্তৃপক্ষ অনেকটাই যেন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অসহায়।
সংবাদমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছেÑ রেল কর্তৃপক্ষ অনলাইনে কাজটি কারা পাবে সে ব্যাপারে খুব আগ্রহী। এ কাজের ঠিকাদার টিকিট বিক্রির অর্থের একটা অংশ পায়। এ ক্ষেত্রে ঠিকাদারের প্রাপ্তির অংশটি ঠিকই পূর্ণরূপে হাসিল হয়। অন্য দিকে রেলের অনলাইনে টিকিট ক্রেতারা ভালো সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের ভোগান্তির দিকে কর্তৃপক্ষের নজর নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনলাইনে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম ব্যবস্থা বারবার ভেঙে পড়ছে। এ জন্য কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নেয় না। অন্য দিকে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের খোঁড়া যুক্তি দেখায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন টিকিট ক্রেতারা। অথচ এ ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার ছিল। এ ব্যবস্থা যাতে নিরুপদ্রব চলতে পারে সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি দরকার ছিল। এ ঘটনায় একটি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া অত্যাবশ্যক। মূলত রেলের সেবার অগ্রগতি নেই। বিভাগটি চলছে পুরনো নিয়মে। শুধু টিকিট কেনাকাটা নয়; লাইন সংস্কার, নতুন বগি ক্রয়, দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়ার বেলায়ও উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। সাথে রয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষবাণিজ্য।
আমরা মনে করি, রেলকে একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে মানসিকতায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো নিজেদের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে চালালে কেবল পিছিয়ে পড়তে হবে। প্রথমে এই মানসিকতা বদলানো জরুরি। পরে অনিয়ম দুর্নীতি ও নিয়োগবাণিজ্যের চেয়ে সেবার বিষয়টি প্রধান হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা