২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সমতলের চা-বাগান স্বপ্ন জাগাচ্ছে

এটা পূরণ হোক নির্বিঘ্নে

-

নয়া দিগন্তের একটি সচিত্র খবরে প্রথমেই বলা হয়েছে, পঞ্চগড় অঞ্চলের সব সমতল চা-বাগানে নতুন কুঁড়ি উঁকি দিচ্ছে। তাই আরম্ভ হয়েছে চা-পাতা সংগ্রহের ব্যস্ততা। সম্প্রতি দুই মাস কারখানাগুলো বন্ধ ছিল প্রয়োজনে। এখন সব ক’টি কারখানায় শুরু হয়ে গেছে কাঁচা চা-পাতা কেনা। চলতি বছর পঞ্চগড় এক কোটি ৮০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে। উল্লেখ্য, পঞ্চগড়ের চা-পাতা বাংলাদেশে সাড়া জাগিয়েছে। সমতল ভূমির এসব চা-বাগান সারা দেশেই আলোড়ন তুলেছে।
জানা যায়, এ বছর দেশের উত্তরাঞ্চলে চা-চাষের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে পয়লা মার্চ। বাংলাদেশ চা-বোর্ড জানিয়েছে, গত বছর চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক কোটি কেজি। চা-পাতা উৎপন্ন হয়েছে এক কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি, যা ২০২০ সালের চেয়ে ৪২ লাখ ৪০ হাজার কেজি বেশি। পঞ্চগড়ে মাটির উর্বরতার দরুন প্রত্যেক বছরই চা-গাছের ডালপালা ছেঁটে দিতে হয়। তা হলে পাতা ঘন হয়ে চায়ের উৎপাদন বেড়ে যায়। তাই চা-চাষিরা ইংরেজি বছরের প্রথম দুই মাস চা-পাতা সংগ্রহ বন্ধ রাখেন এবং সময়টা কাজে লাগান প্রুনিং করে, অর্থাৎ, ডালপালা ছেঁটে ফেলে। শ্রমিকরা চুক্তিভিত্তিক বাগানের চা-পাতা সংগ্রহ করে থাকেন। এক কেজি কাঁচা চা-পাতা তুলে আনলে তিন থেকে পাঁচ টাকা মজুরি দেয়া হয়।
একজন চা-চাষি জানান, বেশি উৎপাদনের জন্য চা-বাগানে নির্ধারিত সময়ে প্রুনিং করতে হয়। এ জন্য তখন দুই মাস একাধারে চা-পাতা তোলা বন্ধ থাকে। ওই সময় চা-গাছের গোড়া পরিষ্কার করা, চা-গাছের মাঝে বেড়ে ওঠা আগাছা বেছে ফেলা এবং প্রয়োজনীয় সেচ কাজসমেত চা-বাগানের পরিচর্যা করতে হয়। সঠিক পরিচর্যায় চায়ের নতুন নতুন কুঁড়িতে বাগান ভরে উঠেছে। ফলে গত পয়লা মার্চ নতুন চা-পাতা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।
দেশে সিলেট অঞ্চলের পর পঞ্চগড় দ্বিতীয় চা উৎপাদনের এলাকা, এখানে চা-চাষ শুরু হয়েছে প্রায় সিকি শতাব্দী আগে, ১৯৯৬ সালে। ২০০০ সালে তার আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা। পঞ্চগড়ের অনুসরণে প্রত্যেক বছর ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলায় চা-চাষের পরিধি বাড়ছে। অতীতের পতিত গো-চারণভূমিতে চায়ের সবুজ পাতা দোল খাচ্ছে। পঞ্চগড়ের চা বিখ্যাত দার্জিলিং টি’র সমমানের। মান উন্নত বলে পঞ্চগড়ের চা বর্তমানে রফতানি হচ্ছে। এ অঞ্চলে চায়ের ব্যাপক চাষ হওয়ায় প্রক্রিয়াজাতকরণের লক্ষ্যে ১৮টি কারখানা চালু হয়েছে। সেই সাথে হয়েছে হাজারো লোকের কর্মসংস্থান। শ্রমিকরা চায়ের বাগানে কাজ করে দিনে মাথাপিছু পাঁচ থেকে সাত শ’ টাকা আয় করছেন।
চা-বোর্ডের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. আল মামুন বলেছেন, সমতল এলাকায় চা-চাষের জন্য বৃহত্তর দিনাজপুরের তিন জেলা এবং পাশের নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এসব জেলায় চা-চাষ বাড়ছে। গত বছর আগের চেয়ে চা দেড়গুণ উৎপন্ন হয়েছে। অবশ্য ক্রয়-কমিটি আজো কাঁচা চা-পাতার ক্রয়মূল্য স্থির না করায় সংশ্লিষ্ট চাষিরা দ্বিধাগ্রস্ত কিছুটা। তাদের সমস্যা সমাধানে চা বোর্ড সহায়তা করে থাকে। যেমন- স্বল্পমূল্যে উন্নত জাতের চা-চারা দেয়া হচ্ছে। চাষিদের সমস্যা দূর করার জন্য মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে, যার নাম ‘দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি’। পঞ্চগড়ে আঞ্চলিক কার্যালয়ে পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাব স্থাপিত হয়েছে। সেখানে রোগবালাই দূরীকরণ ও পোকা দমনে সাহায্য করা হচ্ছে। চায়ের উৎপাদক ও শ্রমিকসহ গণমানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।
দেশবাসীর সাথে আমরাও আশা করি, পঞ্চগড়সহ দেশের সব সমতলে চা-চাষ বৃদ্ধি পাবে এবং চা-চাষিদের স্বপ্ন পূরণ হবে।


আরো সংবাদ



premium cement