প্রত্যাশা বৈষম্যহীন সমাজ
- ২৬ মার্চ ২০২২, ০০:০০
আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। এ গৌরবময় দিনের স্মরণের মধ্য দিয়ে নতুন দিগন্তে ছুটে চলার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয় জাতি। গত বছর আমরা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছি। এ গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্পর্শের ক্ষণটি রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষভাবে উদযাপনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সরকারের ওই আয়োজনের সাথে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর একাত্মতা অনুভূত হয়েছে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল। কারণ, উদযাপন অনুষ্ঠানে সাধারণ জনগণের তেমন অংশগ্রহণ ছিল না।
যাই হোক, একটি জাতির ইতিহাসে ৫১ বছর খুব দীর্ঘ একটা সময় নয়। তবে বিগত কয়েক যুগে জাতিসত্তার যে বিকাশ ও উন্নয়ন হয়েছে সেটা লক্ষণীয়। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সাথে প্রায় একই সময়ে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলো কিংবা যেসব দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে আমাদের বিশেষ মিল রয়েছে; তাদের মধ্যে অনেক দেশ প্রভূত উন্নতি করেছে। যেমন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার কথা বলা যায়। দেশ দু’টি এখন উন্নত দেশগুলোর অন্যতম। এসব দেশ শুধু যে জনসাধারণের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আমূল পাল্টে দিয়েছে তাই নয়, সুশাসনও প্রতিষ্ঠা করেছে। গণতন্ত্র পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। ওইসব দেশের নাগরিকরা রাজনৈতিক সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ণ মর্যাদা ভোগ করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল পটভূমি রয়েছে। এ দেশের মানুষ শোষণ বঞ্চনা ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অভিপ্রায়ে রাষ্ট্র গঠন করেছেন। এ জন্য দেশের মানুষ রক্ত দিয়েছেন। অনেক মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। এক কথায় আমাদের স্বাধীনতা চড়াদামে কেনা। স্বাধীনতার চেতনা ছিল শোষণ-পীড়নমুক্ত অবাধ মুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। আজ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয় স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নকারী সেসব বীরকে। একই সাথে আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারি ৫১ বছরের অর্জন নিয়ে। দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ অগ্রসর হয়েছে। তবে একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে এখনো আরো অনেক পথ বাকি।
আমরা দেশ স্বাধীন করেছি এমন একটা দেশ পেতে যেখানে মানুষের মতপ্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা থাকবে। প্রত্যেকে নিজের মতামত মুক্তভাবে ব্যক্ত করতে পারবেন। আজ মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার নানাভাবে সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। মানুষের মুখ বন্ধ রাখার জন্য কাঠামোগত নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়া গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা খুব করুণ। নির্বাচনব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ সব ক্ষেত্রে সীমাহীন স্বাধীনতা ভোগ করছেন। বিপরীতে বেশির ভাগ মানুষের গণতন্ত্র চর্চার পথ প্রায় রুদ্ধ। অথচ স্বাধীনতার ৫১ বছরে আমাদের একটা উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকতে পারত।
বলা হচ্ছে, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটেছে। ক্ষমতাসীনদের প্রচারণা অনুযায়ী দেশ এখন উন্নয়নের পথে দ্রুত ধাবমান। আমাদের লক্ষ্য এখন উন্নত দেশ হওয়া। বাস্তবে বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ধনী-গরিবের ব্যবধান চওড়া হয়েছে। সমাজে এখনো আক্ষরিক অর্থে তীব্রভাবে দারিদ্র্য বিরাজমান। অন্য দিকে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নেই সাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। একশ্রেণীর জন্য দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের পথ অবারিত করা হয়েছে। মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্তের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি বহু আগেই উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারতাম না কিংবা দেশকে নিয়ে যেতে পারতাম না উন্নত দেশের কাতারে? কেন পারিনি, তা জানতে স্বাধীনতা দিবসের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আত্মসমালোচনার প্রয়োজন আছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে ৫১ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা আশাবাদী হতে চাই। দেশে নতুন চেতনার বিকাশ হবে। মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর হবে। গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা জোরদার হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা