আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সবাই নির্বিকার
- ২৬ মার্চ ২০২২, ০০:০০
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন, এ নিয়ে এখন আর কেউ প্রশ্ন তোলেন না। একসময় অপরাধ নিয়ে সাধারণ নাগরিকের মধ্যেও সচেতনতা ছিল। খুনোখুনির ঘটনা মানুষ সহ্য করতেন না। সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পেলে প্রশ্ন করতেন। অনেকসময় মন্ত্রী এ নিয়ে বিব্রত হতেন। দেশে সে পরিস্থিতি নেই। এখন চুরি-ডাকাতি ছিনতাই মামুলি ব্যাপার। এগুলোতে যেন গা সওয়া হয়ে ধাতস্ত হয়ে উঠেছেন সবাই। এর সাথে হত্যাও নিয়মিত বিরতিতে চলতে পারে, এমন মনোভাব সামষ্টিক জীবনে জেঁকে বসেছে। এ যে অপরাধ নিয়ে সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যাওয়া, এটি কিন্তু বিপজ্জনক। অনিয়ম দুর্নীতি ও বেআইনি কর্মকাণ্ড এতটাই বেড়েছে, কিছুতেই যেন কিছু এসে যায় না। শুধু ভুক্তভোগীরাই বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন।
শুক্রবারের পত্রিকায় খুনোখুনির তিনটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। একটিতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ নিজেই আক্রান্ত হয়েছে। অন্য দুটির একটিতে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অপরটিতে একজন জনপ্রতিনিধির লাশ মিলেছে। রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় শাহজাহানপুরে খুন হয়েছেন। তাকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি সেখানে যানজটে আটকা পড়ে। অন্য পাশের ফাঁকা রাস্তায় বিপরীত দিক থেকে আসা মুখোশধারী এক দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। মাইক্রোবাসের কাচ ভেদ করে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান টিপু। গাড়িচালকও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক পথচারী তরুণী নিহতসহ আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আলোচিত যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। ওই হত্যার পেছনে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল। মূলত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণের সাথে বিপুল অর্থবিত্তের যোগসূত্র রয়েছে। এ নিয়ে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র রেষারেষি চলে। শেষ পর্যন্ত খুনোখুনির মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে। জাহিদের সাথে আধিপত্য বিস্তার ও ফুটপাথ বাণিজ্য নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অন্যান্য উপদলের উত্তেজনার কথা শোনা যাচ্ছে। রাজধানীতে চাঁদাবাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রাণহানির ঘটনা শেষ হওয়ার লক্ষণ নেই। সঠিক তদন্ত ও দায়ীদের বিচার না হওয়াই এর প্রধান কারণ। বিচারের স্বাভাবিক গতির বদলে ক্ষমতাসীনদের পছন্দের প্রাধান্যে এমনটি হচ্ছে। যত দিন না ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এ নীতির পরিবর্তন ঘটছে; ততদিন এভাবে খুনোখুনি চলতে থাকবে।
অন্যদিকে, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত এক ইউপি সদস্য নিখোঁজের পর প্রতিবেশীর ধানক্ষেতে তার লাশ পাওয়া গেছে। আরেক ঘটনায় রাজধানীর বংশাল থানার গেটে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক উপ-পরিদর্শকসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাটি সাদা চোখে দেখার কারণ নেই। এ ধরনের ঘটনা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আত্মসমালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। প্রশ্ন হলো, একজন ছিনতাইকারী কিভাবে ছয়জন পুলিশের ওপর চড়াও হতে পারে। কয়েক বছর ধরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অপরাধীদের আক্রমণের ঘটনা বেড়েছে। এতে অনেকে আশঙ্কা করছেন দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে। যারা অপরাধ দমন করবেন তারাই যদি আক্রান্ত হন, তাহলে সাধারণ মানুষ খুনিদের হাত থেকে রেহাই পাবেন কিভাবে। ফলে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হচ্ছে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুরো সিস্টেমে শিথিলতা এসেছে কি না খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বর্তমান সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন তা অনুমান করতে এক দিনের পত্রিকায় উল্লিখিত কয়েকটি খুন-জখমের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিনই সারা দেশে খুনোখুনির বহু ঘটনা ঘটছে। দুশ্চিন্তার বিষয়- এসব ঘটনার প্রতিকার মিলছে না। একটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর কঠোর আইনি পদক্ষেপ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেই। তবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও পরিস্থিতির আরো অবনতিশীল করে তোলার জন্য কম দায়ী নয়। অপরাধ সংঘটনের পর মানুষ আর আগের মতো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। এ চেতনাহীন অবস্থার পরিবর্তনে সম্মিলিতভাবে জেগে উঠতে হবে। সজাগ হতে হবে। তবেই আমরা জাতিগতভাবে এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা