২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ

গণবিরোধী প্রস্তাব থেকে সরে আসুন

-

নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া দামে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। বাজারে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। টিসিবির ন্যায্যমূল্যের ট্রাকের পেছনে হুমড়ি খেয়ে পড়া মানুষের সারি যখন দীর্ঘতর হচ্ছে তখনই গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হলো। মানুষের দুরবস্থা বিন্দুমাত্র আমলে না নিয়ে অবিবেচকের মতো গ্যাসের মূল্য ৩৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গ্যাসের সরবরাহ আসছে প্রধানত দু’টি উৎস থেকে। একটি দেশীয় গ্যাসফিল্ড থেকে উত্তোলন, দ্বিতীয়টি বিদেশ থেকে আমদানি। আমদানি করা হয় দুই ধরনের চুক্তির আওতায়। জি-টু-জি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায়, আর স্পট মার্কেট (দরপত্রের মাধ্যমে বর্তমান দরে) থেকে। দেশীয় উৎসের গ্যাসের দাম বাড়েনি, জি-টু-জি ভিত্তিতে আনা গ্যাসের দামও বাড়েনি। বেড়েছে শুধু স্পট মার্কেট থেকে আনা গ্যাসের দাম। যার পরিমাণ সামান্য। অনুপাত করলে দেখা যায়, দৈনিক দাঁড়ায় ৪ শতাংশের মতো।
গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো ভোক্তাপর্যায়ে দাম ১১৬ শতাংশ বাড়াতে এর আগে প্রস্তাব করেছিল বিইআরসির কাছে। কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব পর্যালোচনা করে তার ওপর গণশুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। চার দিনের গণশুনানির গত সোমবার ছিল প্রথম দিন। ওই দিন সকালে পেট্রোবাংলা ও বিকেলে জিটিসিএলের গ্যাস সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানির আয়োজন করা হয়। শুনানিতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১২ টাকা ৪৭ পয়সা নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করে বিইআরসির কারিগরি (মূল্যায়ন) কমিটি। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৩৬ পয়সায়। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটারে তিন টাকা ১১ পয়সা বা ৩৩ দশমিক ২৩ শতাংশ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড-জিটিসিএল সঞ্চালন খরচ ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে চলতি অর্থবছরে ৭৩ পয়সা এবং পরবর্তী বছরে ৮৬ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ৪৮ পয়সা করার পক্ষে সুপারিশ দিয়েছে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেছেন, এতে সামাজিক কী প্রভাব পড়বে কোম্পানিগুলোর রিপোর্টে তা সেভাবে উঠে আসেনি। সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন করলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। কারিগরি কমিটিও সেভাবে তুলে আনেনি। বিশ্বপরিস্থিতির কারণে ফুড, ফুয়েল ও সারের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির আবেদন করায় আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে গণশুনানি নেয়া হচ্ছে। তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তির মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। আর জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি বিভাগের হাতে একাধিক বিকল্প ছিল। সে দিকে না গিয়ে দাম বাড়ানোর জটিল পথে পা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিকল্প উপায়ে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করার সুযোগ ছিল।
গ্যাসের দাম বাড়লে জনদুর্ভোগ আরো বেড়ে যাবে এ কথা সবার জানা। করোনার কারণে ভোক্তাদের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকার অবস্থা। তার ওপর গ্যাসের দাম বাড়ালে গণপরিবহনসহ পণ্যবাহী পরিবহনের ভাড়াও আবার বাড়বে। এতে করে দ্রব্যমূল্য আরো বেড়ে যাবে। ফলে গণমানুষের জীবন হয়ে উঠবে আরো দুর্বিষহ। স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন চালানোই দায় হয়ে যাবে। তাদের দুঃখের সীমা-পরিসীমা থাকবে না।
গ্যাসের দাম বাড়ানো গণবিরোধী হলেও দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় সরকার নাগরিকদের কাছে জবাবদিহির কোনো গরজ বোধ করছে না। বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর জনবান্ধব আচরণ দিন দিন লোপ পাচ্ছে। তা সত্ত্বেও আমরা বলতে চাই, গ্যাসের দাম বাড়ানোর মতো গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন।


আরো সংবাদ



premium cement