আশা করার মতো কিছু নেই
- ২২ মার্চ ২০২২, ০০:০০
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অংশীদারিত্ব সংলাপ হয়েছে বাংলাদেশের। সংলাপে উভয় দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব বিষয়ই আলোচনায় এসেছে। তবে বাংলাদেশের যে তাৎক্ষণিক উদ্বেগের বিষয় সে প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। সেটি হলো বাংলাদেশের আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনী ও এর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রশ্ন।
গত রোববার ঢাকায় দু’পক্ষের আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে র্যাব ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। এতে চরমপন্থীরা উৎসাহিত হতে পারে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে, যা হতে পারে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার কারণ। এ যুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার জোরালো আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা-পরবর্তী গত তিন মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে এবং এ জন্য যেসব প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। দাবি করা হয়, সরকার র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। কিন্তু গত তিন মাসে যে অগ্রগতির কথা বলা হচ্ছে; তা সন্তোষজনক কি না জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। এ প্রশ্নে নীরব থেকেছেন সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দানকারী দেশটির রাজনীতি-বিষয়ক উপমন্ত্রী ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। তিনি বলেন, তারা এ সংক্রান্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখবেন।
নুল্যান্ডের নীরব থাকা অর্থপূর্ণ। তারা বাংলাদেশী স্টাইলে ফাইল নাড়াচাড়া করে বলে দেবেন না, সব ঠিক আছে। যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটিই গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন আদৌ সেগুলো কার্যত বাস্তবায়ন করা হয়েছে কি না। মুখের কথায় বাংলাদেশে কাজ চলে যায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেটি ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে যে অনেক গভীরে যাবে নুল্যান্ড স্পষ্ট করেছেন। নিষেধাজ্ঞা সহসাই উঠছে না এমন ইঙ্গিত করে বলেছেন, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, আরো হবে। আগামী দিনে বিভিন্ন বৈঠকে কথা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারি, বিষয়টি জটিল ও সমস্যাসঙ্কুল। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই নিশ্চুপ থাকবে না। মৌলিক আইনের ব্যত্যয় হোক, সেটা আমরা চাই না।’ এর সরল অর্থ হলো, সংলাপ থেকে আশা করার মতো কিছু আপাতত মেলেনি।
মূলত রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা থাকেন তাদের সব দিক ভেবেচিন্তে কাজ করতে হয়। বাংলাদেশে সেটি প্রায় সময়ই থাকে অনুপস্থিত। নিরঙ্কুশ ক্ষমতার তাপ সবার পক্ষে সয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। গুম, খুন, নির্বিচার হত্যা, মানবাধিকারের সব বিধিবিধান দুর্বল করার এটি একটি কারণ। কিন্তু পরিণতি আঁচ করতে ব্যর্থ হন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন। অথচ এক জিএসপি-সুবিধা যে, গত এক যুগেরও বেশি সময়ে ফিরিয়ে আনতে পারেননি সেই দৃষ্টান্ত তাদের সামনে ছিল।
বাইডেন প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হবে তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে। তবে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের আওতায় অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত যেসব উপাদান রয়েছে সে পথে বাংলাদেশকে টানছে যুক্তরাষ্ট্র। সংলাপে বাংলাদেশের কাছে অস্ত্র বিক্রির পথ সুগম করতে একটি চুক্তির খসড়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট-জিসোমিয়া) ঢাকার কাছে হস্তান্তরও করেছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন সালাম জানিয়েছেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে সেই সাক্ষাৎ হবে।
বৈশ্বিক নাট্যমঞ্চে চীন-রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান উচ্চমন্য হয়ে ওঠার চেষ্টা আর পশ্চিমা বলয়ের তা ধরে রাখার মরিয়া প্রয়াসের প্রেক্ষাপটে জটিলতর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব যতই বাড়–ক না কেন সেটি পুঁজি করার মতো আমাদের নেতৃত্বের সামর্থ্য কতটুকু রয়েছে; তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এখন যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়াগুলো পূরণের বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। বৃহৎ প্রতিবেশীর প্রতি একতরফা বন্ধুত্বের দায় যেভাবে প্রায় শূন্য হাতে মেটাতে হচ্ছে; সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যুক্তরাষ্ট্রের বেলাতেও হতে যাচ্ছে বলে মনে হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা