২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা

প্রকৃতির বৈরী আচরণ

-

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বিশ্বের সব দেশকেই কমবেশি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে গরিব দেশগুলো এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের চিরচেনা প্রাকৃতিক পরিবেশে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে, যা এখন দৃশ্যমান। এতে করে ঝড়, বৃষ্টি, খরা, বন্যা অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি বেশি আক্রান্ত হতে হচ্ছে। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা, দিন দিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়বে বৈ কমবে না।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন বাংলাদেশের মানুষের নিয়তিতে পরিণত হচ্ছে। যে কার্যকারণের প্রতিক্রিয়ায় দেশে অসময়ে তীব্র শীত এবং অসহ্য গরম পড়ছে। অথচ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলো। এ কথাও ঠিক, আমাদের অনেক অপরিকল্পিত উন্নয়নকাণ্ড প্রকৃতির এই অনাকাক্সিক্ষত পরিবর্তনের জন্য অনেকাংশেই দায়ী। কিন্তু এ নিয়ে কারো তেমন মাথাব্যথা নেই।
এখন চলছে বসন্তকাল। অথচ গ্রীষ্মকাল না আসতেই পক্ষকাল ধরে বসন্তেই এবার দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত গরম পড়ছে। দেখা যাচ্ছে, এবার ফাল্গুন মাস থেকেই গরম বেড়ে গেছে। গরমে অতিষ্ঠ মানুষের সাথে প্রাণিকুলও। সাধারণত বছরের এ সময় কয়েক দিন পরপর হালকা বৃষ্টি হয়। এবার সে রকম হচ্ছে না। যেহেতু অনেক দিন ধরে বৃষ্টি নেই, তাই তাপমাত্রা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে গেছে। এদিকে এবার শীত মৌসুমে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হওয়ায় এবং মার্চে কোনো বৃষ্টি না থাকায় চলতি বছরকে অস্বাভাবিক বলছেন আবহাওয়াবিদরা।
বসন্ত শেষ হতে আরো মাসখানেক বাকি। এরই মধ্যে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। অনেক দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। দেশের প্রায় অর্ধেক অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, এ অবস্থা আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। পশ্চিমা বাতাস থাকায় আবহাওয়া এখনো শুষ্ক। বৃষ্টি হওয়ার জন্য আর্দ্র বাতাসের প্রয়োজন। দখিনা বাতাস থাকলে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা বাতাসে আর্দ্রতা থাকে এবং বৃষ্টি হয়। অবশ্য, আর্দ্র বাতাস নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, যেহেতু সাগরে একটি নিম্নচাপ পরিণত হয়েছে, এটা উপকূলের কাছাকাছি এলে বাতাসের ধরন পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে কি না, এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে বিশ্বের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএমওর হিসাবে, মার্চ মাসে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়া খুবই ব্যতিক্রমী ঘটনা। যদি নিম্নচাপের প্রভাবে বাতাসের ধরন পাল্টায় তখন দেখা যাবে, মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে আস্তে আস্তে দেশে অসহনীয় গরম সহনীয় পর্যায়ে আসবে। অন্যদিকে আগামী কিছু দিনের মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও কালবৈশাখীর সাথে বৃষ্টি দেখা যেতে পারে। এতে তাপমাত্রা কমে আসতে পারে। তার আগে তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
পৃথিবীব্যাপী চরম ভাবাপন্ন জলবায়ু পুরোপুরি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা বিশ্বের কোনো একক দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমরাও আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পূর্ণ রোধ করতে পারব না। সারা বিশ্বকে সম্মিলিতভাবেই এ সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে। আগামী প্রজন্মের কাছে বর্তমান প্রজন্মের দায় এটি।
আবহাওয়াবিদ ও প্রকৃতি-বিজ্ঞানীদের মতো আমরাও মনে করি, বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিবর্তনে আমাদের যেসব কর্মকাণ্ড দায়ী তা নিয়ন্ত্রণে আনতে আরো মনোযোগী হতে হবে। দেশে পরিবেশ বিপর্যয়ে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প বেশি ক্ষতি করতে পারে সেসব বর্জন করতে হবে। পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে। সাথে সাথে নদীদূষণ এবং পরিবেশ দূষণে ক্ষতিকর পণ্য নিষিদ্ধ করা জরুরি। দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে যত বৃক্ষ থাকা দরকার সেই ঘাটতি পূরণে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সংরক্ষণে মনোনিবেশের বিকল্প নেই। সেই সাথে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি এগিয়ে নিতে হবে। তা হলেই সম্ভব নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে একটি বাস উপযোগী দেশ গড়া।


আরো সংবাদ



premium cement