স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ইতিহাসে
- ২১ মার্চ ২০২২, ০০:০০
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ বিশিষ্টজন এবং বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। তার প্রতি সম্মান জানিয়ে গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চের বিচার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।
বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়ার পেমই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তালুকদার রিসাত আহমেদ এলাকায় জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সাহাবুদ্দীন আহমদ ছিলেন দেশের প্রখ্যাত আইনবিদ ও ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি। তিনি দু’বার দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। জাতির সর্বসম্মত অনুরোধে এ দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকেই আবার রাষ্ট্রপতি মনোনীত করে। এ সময় তিনি ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৯৫ সালের ৩১ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।
সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রথমে পাকিস্তানের লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমি এবং পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
তিন মেয়ে ও দুই ছেলের জনক বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের কর্মজীবনের সূচনা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। পরে মহকুমা প্রশাসক, সহকারী জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন এবং ১৯৮০ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। চাকরি সম্পর্কিত, নির্বাচন নিয়ে কলহ, শ্রম ব্যবস্থাপনার সম্পর্কবিষয়ক বিভিন্ন মামলায় তার দেয়া রায় বহুল সমাদৃত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মামলায় তার যুগান্তকারী রায় দেশের সংবিধানের পরিশোধনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সততা ও নিরপেক্ষতার যে অনন্য দৃষ্টান্ত তিনি রেখে গেছেন সে জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। জাতির বড় ধরনের সঙ্কট ও অনিশ্চয়তার সময়ে সাহসিকতার সাথে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে তার অবস্থানের কারণে জাতি এক চরম দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি শপথ নেন এবং জাতিকে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেন। দেশের ইতিহাসে এক সন্ধিক্ষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে তার প্রাজ্ঞ ও সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের কারণেই একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় দেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার সূচনা হয়।
তার মৃত্যুতে জাতি একজন বিচক্ষণ, বিরল সততার অধিকারী, গণতন্ত্রমনা, ন্যায়নিষ্ঠ ও দেশপ্রেমিককে হারাল। বস্তুতপক্ষে তার ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে সততা, সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়ের পক্ষে অটল থাকার বহু যুগের যে ঐতিহ্য এ দেশে বহমান ছিল সেই ধারাটির একনিষ্ঠ একজনকে আমরা হারালাম। আমাদের এ জাতির ইতিহাস তাকে মনে রাখবে। এ জন্যই তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বহুকাল। তার নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা