২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে দেশ

ভবন নির্মাণ কৌশল মানতে হবে

-

সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকা মহানগরী ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা শহরগুলোর অন্যতম। এক শ’ বছর আগের বাংলাদেশ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে দেশে আরেকটি বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। এতে রাজধানীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা করছেন তারা। তবে বাস্তবতা হলো- অননুমোদিত ও অবৈধ ভবন ভাঙা অভিযান থেমে গেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায়। শুধু রাজউক নয়, সিটি করপোরেশনেরও এ ধরনের কোনো তৎপরতা এখন আর চোখে পড়ছে না। প্রতিদিনই রাজধানীতে উঠছে নতুন নতুন অননুমোদিত স্থাপনা। খোদ রাজউকের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ বিভাগে ১০ হাজারের মতো অবৈধ ভবনের তালিকা রয়েছে। এক যুগ আগে প্রস্তুত করা হলেও ওই তালিকা ধরে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
বাস্তবে ঢাকার অনেক ভবনে নিচের অংশে কোনো ত্রুটি না থাকলেও উপরের দিক থেকে ভবনের চার পাশ বাড়িয়ে ফ্লোর স্পেস বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই এগুলো গড়ে উঠেছে। অন্য দিকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক এমন ভবন রয়েছে; যেখানে ছয়তলার অনুমোদন নিয়ে ১০তলা করা হয়েছে। এমন অনেক ভবন রয়েছে যেগুলোর নকশা অনুমোদনে সামনে-পেছনে বারান্দা ছিল না; পরে নির্মাণের সময় দ্বিতীয় তলা থেকে বারান্দা গড়ে তোলা হয়েছে। ভবনের উপরের দিকে এমনভাবে বারান্দা তৈরি করা হয়েছে, যার পুরোটাই রাস্তার ওপর। উপরের তলায় হওয়ায় চলাচলরত যানবাহনের কোনো সমস্যা হয় না; শুধু নিচের তলা নকশা অনুযায়ী করা হয়েছে।
এক শ’ বছর আগে ঢাকা ছিল ছোট শহর। তবে সিলেটে অথবা আশপাশের বড় ভূমিকম্পের আঁচড় ঢাকাতেও লেগেছিল। তখন বৃহৎ স্থাপনা না থাকায় ঢাকায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। কোনো কোনো ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এখন ঢাকার আশপাশে সাত অথবা এর চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে ক্ষতি হবে ধারণাতীত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে পুরান ঢাকায়। নগরীর এ অংশে বহু ভবন রয়েছে শত বছরের বেশি পুরনো। একই সাথে নকশা অনুমোদন ছাড়া শুধু রাজমিস্ত্রি দিয়ে তৈরি করা অনেক ভবন রয়েছে। এসব ভবন বড় ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি সহ্য করতে পারবে না, ভেঙে পড়বে। ফলে জানমালের বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে পুরোনো, জরাজীর্ণ ও অনুমোদনহীন দুর্বল ভবনগুলো এখনই ভেঙে ফেলা উচিত। এ কথা সত্যি, পুরান ঢাকা নতুন করে গড়ে তুলতে রাজউক কিছু উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এখন বাস্তবতা ভিন্ন। পুরান ঢাকার বাড়ির মালিকদের সহায়তা করলে পুরনো, জরাজীর্ণ ভবন ছেড়ে তারা নতুন ভবন তৈরিতে উৎসাহী হতে পারেন। এটি করলে পুরান ঢাকা ফের বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। ভূমিকম্পের দুর্যোগসহ অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে পাতে পারেন সেখানকার বাসিন্দারা।
ঢাকা মহানগরীর যত্রতত্র অননুমোদিত ভবন যথাযথভাবে প্রকৌশল নিয়ম মেনে না করায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি সহ্য করতে পারবে না। অপরিকল্পিত ভবন ভূমিকম্পে ক্ষতির মাত্রা বহু গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে; কিন্তু প্রকৌশল নিয়ম মেনে ভবন নির্মাণ করা হলে সেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা সম্ভব। ঐতিহ্যবাহী অনেক ভবন না ভেঙে প্রকৌশল কৌশল প্রয়োগ করে শক্ত ও মজবুত করাও যায়। সে জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, ভূমিকম্প ঝুঁকি কমিয়ে আনতে ঢাকার অননুমোদিত ও জরাজীর্ণ ভবনগুলো ভেঙে রাজউক জমির মালিকদের নতুন নকশা করে দিতে পারে। আর ব্যাংকগুলো সহজ শর্তে ঋণ দিলে বাড়ির মালিকরা পুরোনো, জরাজীর্ণ ও অনুমোদনহীন স্থাপনা ভেঙে মজবুত বাড়ি নির্মাণ করতে পারেন। বাড়ি বানাতে ঋণ দিলে ব্যাংকে পড়ে থাকা অলস অর্থ যেমন কাজে লাগবে; সাথে সাথে অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার হবে। নতুন নকশায় বাড়ি নির্মাণ হলে দুর্ঘটনা যেমন এড়ানো সম্ভব হবে; তেমনি ভবনের নান্দনিকতাও বাড়বে। তবে পুরান ঢাকায় ছোট ছোট কয়েকটি প্লট একত্র করে নতুন নকশা করে বাড়ি নির্মাণ হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সে জন্য রাজউক বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে। মনে রাখতে হবে, এ জন্য আমাদের অযথা কালক্ষেপণের অবকাশ নেই। এ ক্ষেত্রে গাফিলতি করলে ভূমিকম্প ঝুঁকি থেকেই যাবে যার খেসারত গুনতে হবে চড়া মূল্যে।


আরো সংবাদ



premium cement