হোক পুণ্যার্জনের উপলক্ষ
- ১৮ মার্চ ২০২২, ০০:০০
হিজরি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি বিশেষ করে আমাদের এই উপমহাদেশে ‘শবেবরাত’ হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। আজ দিন শেষে এই রজনী আবার পুণ্য অর্জনের বিরাট সুযোগ নিয়ে সমুপস্থিত হচ্ছে। পবিত্র এ রাতটি বিশ্বের মুসলমানরা বিভিন্ন নামে পালন করে থাকেন। তবে এটা মনে করা উচিত হবে না, অন্যান্য দিন ইবাদত থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে রাখব। আমাদের প্রেরণা নিতে হবে, প্রতিটি দিন যেন আমাদের জন্য এ ধরনের ইবাদতের উপলক্ষ হয়।
মানুষ পৃথিবীতে আজ নানাভাবে বিপদগ্রস্ত। এক দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অন্য দিকে মনুষ্যসৃষ্ট যুদ্ধ। সারা বিশ্বের বিশাল অংশের মানুষ খাদ্য পানীয় চিকিৎসার মতো দৈনন্দিন চাহিদার সঙ্কোচনের মুখে পড়েছে। অন্য দিকে আল্লাহ চাইলে জীবিকা বাড়িয়ে দেন; চাইলে কাউকে জীবিকা সীমিত করে দেন। তিনি চাইলে এ বিপর্যয়ের সমাধান হয়ে যায়। আল্লাহ মানুষের কল্যাণকর চাওয়াগুলোর জবাব দিয়ে থাকেন। এ দিনে মানুষের প্রত্যাশা থাকে তাকে যেন কল্যাণের দিকে পরিচালিত হওয়ার তাওফিক দিয়ে দেন।
আলেম ও স্কলাররা বলতে চান ‘মধ্য শাবানের এই রাতে পুরো কুরআন মাজিদ বাইতুল মামুর থেকে দুনিয়ার আসমানে এসেছিল। তারপর লাইলাতুল কদরের রাতে এর প্রথমাংশ নাজিল হয়েছিল। শবেকদর বা লাইলাতুল কদরে আল্লøাহ রাব্বুল আমিনের নির্দেশে প্রত্যেক প্রজ্ঞাময় বিষয় নির্ধারিত হয়।’ কদরের রাতের ব্যাপারে সূরা কদরে আল্লাহ বলেন, ‘আমরা একে নাজিল করেছি এক মর্যাদাপূর্ণ রাতে, তুমি কি জানো রাতটি কী? মর্যাদাপূর্ণ রাতটি এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এতে ফেরেশতা ও রূহ তাদের মালিকের সবধরনের আদেশ নিয়ে অবতরণ করে। প্রশান্তি; ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত থাকে।’
শবেবরাতের উল্লেখ দেখা যায় ইমাম তিরমিজি (রহ:) বর্ণিত হাদিসে। এতে বলা হয়েছে, এক রাতে মুহাম্মদ সা:-এর স্ত্রী হজরত আয়েশা ঘুম থেকে জেগে গেলেন। কিন্তু নবী করিম সা:কে বিছানায় দেখতে পেলেন না। আয়েশা রা: তাঁকে খুঁজতে বের হলেন। তিনি নবী সা:কে দেখতে পান গোরস্তানে। তিনি মূলত ক্ষমা ও পরকালীন কল্যাণ কামনায় এ সময় আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছিলেন। এমন প্রার্থনা করতে নবীর স্ত্রীরা তাকে নিয়মিত দেখতে পেতেন। তবে বিশেষ সময়ে তাকে অতি বিনীত কাতর হয়ে দীর্ঘ রজনী আল্লাহর মুখোমুখি হয়ে ইবাদত করতে তারা দেখেছেন।
শবেবরাত সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস রয়েছে, কিছু ভুল আমলও অনেকে করে থাকেন এ উপলক্ষে। এসব থেকে বিরত থেকে সহিহ নিয়তে ও নিয়মে ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে শবেবরাত অতিবাহিত করাই মুমিন হিসেবে আমাদের সবার কর্তব্য। বিশেষ করে উন্নত খাবার দাবারের আয়োজন করার জোরালো প্রচলন আমাদের সমাজে দেখা যাচ্ছে, যার সাথে আমাদের নবীর কার্যক্রমের আমলের কোনো মিল নেই। খাবার আয়োজন করতে গিয়ে বহু বাড়াবাড়িও আমরা করি। এমনকি ইবাদত-বন্দেগির চেয়ে খাবার দাবারের প্রতি আমাদের ঝোঁক বেশি চলে যায়। কোনো কোনো গৃহে ইবাদত বাদ দিয়ে এদিন কেবল বড় আকারের খাবার আয়োজন করে বিনোদন করা হয়। এমন আয়োজনে অনেক সময় খাবারের বিপুল অপচয় হয়ে থাকে যেখানে আমাদের সমাজের বড় একটি অংশ তিন বেলার নিয়মিত আহার জোগাড় করতে পারে না। উচিত ছিল ধনীরা এমন আয়োজন বাদ দিয়ে এই দিনে গরিবদের বেশি করে দান করা।
আলোকসজ্জা, আতশবাজির প্রচলনও আমরা এ সময় দেখে থাকি। এর সাথে আমাদের নবীর আমলের কোনো ধরনের সংযোগ নেই। বরং এগুলো এমনসব জাতি গোষ্ঠী থেকে আমরা আমদানি করছি যাদের সাথে আল্লাহর কোনো সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া গোরস্তানে আগরবাতি দেয়াসহ আরো কুসংস্কার আমরা অবলম্বন করি। এর সাথে প্রকৃত ইবাদতের কোনো সম্পর্ক নেই। শবেবরাত উপলক্ষে নামাজ-রোজার পাশাপাশি কায়মনোবাক্যে গাফুরুর রাহিমের কাছে নিজ নিজ গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। পরশ্রীকাতরতা, মা-বাবার অবাধ্যতা, আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ, ব্যভিচার, মদপান বা নেশা করা প্রভৃতি কাজ থেকে নিজেদের সুরক্ষার জন্য কিংবা আমাদের কেউ যদি এসবের সাথে জড়িয়ে পড়ি তাহলে এ দিন আমরা আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে পারি যেন আল্লাহ আমাদের অপকর্ম থেকে বেঁচে চলার তাওফিক দান করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা