২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মানবাধিকার নিয়ে জাতিসঙ্ঘ বিশেষজ্ঞদের আহ্বান

উপেক্ষা করা সমীচীন হবে না সরকারের

-

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় বৈশ্বিক অঙ্গনে নানা ফোরামে উদ্বেগ দীর্ঘদিনের। গত এক যুগ ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন যে বহুগুণ বেড়েছে তার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে। দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনের দেয়া তথ্যেও এর সমর্থন মেলে। কিন্তু সরকার এসব অভিযোগ এতদিন উপেক্ষা করে এসেছে। বিশেষ করে গুমের ঘটনা। ভিন্নমতের অনেক ব্যক্তিকে গুমের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত, সরকার তা মানতে নারাজ। এলিট ফোর্স-র্যাবের বিরুদ্ধে গত বছর ডিসেম্বরের প্রথম দিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর র্যাব-পুলিশের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ হয়েছে। একই সাথে নতুন করে আর কেউ গুমের শিকারও হচ্ছেন না। এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রাতারাতি বন্ধ হওয়ায় এটা বলা যায়, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ হওয়া সম্ভব। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের এখনো নানাভাবে হয়রানি করছে বলে জানা যায়।
নতুন এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় মানবাধিকারকর্মী ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসঙ্ঘকে সহযোগিতা করায় অনেক বাংলাদেশী মানবাধিকারকর্মী সরকারের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের সম্মুখীন হচ্ছেন বলে বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেছেন।
জেনেভা থেকে গত মঙ্গলবার দেয়া বিবৃতিতে জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের কর্মীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ হুমকি, চাপ প্রয়োগ ও হয়রানি শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ২০২১-এর ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভুক্তভোগী অন্তত ১০টি পরিবারের বাড়িতে গভীর রাতে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানকালে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের হুমকি ও ভয় দেখানো হয়। সাদা কাগজে বা আগে থেকেই লিখে রাখা কাগজে তাদের সই করতে বাধ্য করা হয়। আগে থেকে লিখে রাখা কাগজে উল্লেøখ করা থাকে, সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্য গুমের শিকার হননি, বরং তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছেন।
বিষয়টিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বারবার নাগরিক সমাজের কিছু সংগঠনের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের কাছে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ করছেন, যা এসব সংগঠনের দায়িত্ব পালন ঝুঁঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন ও মানবাধিকারকর্মীরা যাতে তাদের বৈধ কাজকর্ম নিরাপদ পরিবেশে কোনো ধরনের হুমকি, চাপ বা প্রতিহিংসার আশঙ্কা ছাড়াই করতে পারেন, বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, সরকারের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থার ভয়ে মানুষ তাদের মানবাধিকারসহ জনস্বার্থ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে জাতিসঙ্ঘের প্রক্রিয়ার সাথে সহযোগিতা করা থেকে বিরত রাখতে পারে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে বেশির ভাগ গুমের ঘটনার সাথে র্যাব জড়িত থাকার খবর বের হয়েছে, যা জাতিসঙ্ঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এসব গুরুতর অভিযোগের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ ও বিশদ অনুসন্ধানসহ স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করতে দায়বদ্ধ। একই সাথে র্যাবসহ অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীকে তদন্ত ও ফৌজদারি দায় থেকে রেহাই দেয়া উচিত নয়। বিশেষজ্ঞরা ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর অধিকার রক্ষা ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
দেশের সব শান্তিকামী নাগরিকের মতো আমরাও মনে করি জাতিসঙ্ঘের মতো বিশ্ব সংস্থার মানবাধিকার পরিষদের বিশেষজ্ঞদের আহ্বানকে বাংলাদেশ সরকারের উপেক্ষা করা কোনো অবস্থাতেই সমীচীন হবে না। উপেক্ষার নীতি নিলে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাব। দেশ কূটনৈতিকভাবে অনেক বন্ধু হারাতে পারে এমন আশঙ্কার সৃষ্টি হবে। এতে আমরা সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement