অর্থপাচার রোধ করতেই হবে
- ১৭ মার্চ ২০২২, ০০:০০
বাংলাদেশ হলো অবৈধভাবে অর্থপাচারের অন্যতম ঘাঁটি। বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থ অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হয়ে থাকে। আবার অবৈধভাবে দেশে আসে এমন লেনদেনও খুব কম নয়। ২০২০ সালে দেশ থেকে লাখ লাখ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক রিপোর্টে বলা হয়, বছরে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। এসব পরিসংখ্যান কতটা ঠিক আমাদের জানা নেই। তবে অঙ্কটা যে সামান্য নয় তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, করোনা মহামারী যখন পুরোপুরি সক্রিয় সে সময় ২০২১ সালে আর্থিক খাতে অবৈধ বা সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। মাত্র এক বছরে এ বৃদ্ধির পরিমাণ ৪৪ শতাংশ।
নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে যেখানে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছিল তিন হাজার ৬৭৫টি। বছরের ব্যবধানে বেড়ে গত বছর হয়েছে পাঁচ হাজার ২৮০টি। এসব লেনদেনে কী পরিমাণ অর্থ জড়িত তার উল্লেখ নেই বিএফআইইউর প্রতিবেদনে। তবে লেনদেনের ৮৫ শতাংশই হয়েছে ব্যাংকিং চ্যানেলে। এর পর আছে মানি রেমিটারের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, আর্থিক খাতে অপরাধের মাধ্যমে উপার্জিত আয় বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সংক্রান্ত সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ১২৪ শতাংশ।
অবৈধ অর্থ লেনদেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আইন-কানুন যথেষ্টই আছে। আছে কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইন। এ আইনের আওতায় কোনো গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় দেয়া ঘোষণার চেয়ে বেশি পরিমাণ লেনদেন করলে বা হঠাৎ তার অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন হলে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা সে তথ্য কেন্দ্রীয় অফিসকে জানাবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয় তা যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) পাঠাবে। বিএফআইইউ প্রয়োজনে তদন্ত করে এবং গ্রাহক সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ সবই আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক।
অর্থপাচারের এ প্রক্রিয়া কেবল অর্থনৈতিক বিধিবিধানের লঙ্ঘনই নয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থের জোগানও এ পথেই হওয়ার ঝুঁঁকি থাকে। কিন্তু সব ব্যাংক যে ঠিকভাবে আর্থিক লেনদেনের নিয়মকানুন মানছে না সেটি স্পষ্ট। এ জন্য গ্রাহক ছাড়াও অনেক ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংসহ বা অন্য মামলা হতে দেখা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, অর্থপাচার হলে দেশে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয় তা প্রশ্নাতীত। বাংলাদেশীদের সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা কানাডায় অবৈধ অর্থ বিনিয়োগের যেসব খবর মাঝে মধ্যে মিডিয়ার কল্যাণে শোনা যায়, সে অর্থ এভাবেই দেশ থেকে বের করে নিয়ে যায় প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ ও দুর্বৃত্তরা।
দেশের অর্থনীতি চরম উৎকর্ষে পৌঁছেছে এমন নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রেই নাজুক অবস্থা বিদ্যমান। কোনো কোনো ব্যাংক দেউলিয়া না হলেও অচলাবস্থার শিকার। মহামারীর পর তৈরী পোশাক শিল্প এখনো পুরো ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে এমন নয়। প্রবাসী আয় প্রণোদনা দিয়েও বাড়ানো যাচ্ছে না।
এমনই এক অবস্থায় অবৈধ পথে অর্থপাচার চলতে থাকলে একসময় অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশের উদ্যোগ একসময় বিশ্বে প্রশংসাও পেয়েছিল। কিন্তু সেই সুনাম ধরে রাখা যায়নি। যে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ দুর্বৃত্তরা বের করে নিতে পারে সে দেশের জনগণের কপালে লেখা দুর্ভোগ প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও বুঝে নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা