২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ফেরি সঙ্কটে দুঃসহ দুর্ভোগ

বাংলাবাজার ঘাটে সমস্যা কেন?

-

বাংলাদেশের একটি বড় ফেরি রুট, পদ্মা নদীর বাংলাবাজার-শিমুলিয়ায় স্বল্পসংখ্যক ফেরি চলার খবর দিয়ে সচিব প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন নয়া দিগন্তের শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা। এতে উল্লেখ করা হয়, এখন যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি চরমে। অনেকে মনে করছেন, ফেরি চলার নামে প্রহসন চলছে। কেবল পাঁচটি ফেরি দিয়ে এ রুটে দিনভর ফেরি সার্ভিস চালু রয়েছে। প্রত্যহ দেশের দক্ষিণ জনপদের শত শত যানবাহন ফেরির সঙ্কটে পদ্মার মতো বিশাল নদী পাড়ি দিতে না পেরে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে আগত, ছোট-বড় যানগুলো একাধারে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ফেরির অভাবে এতে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছে। তখন শেষ বিকেলে নদী পার হতে না পেরে তারা ফেরিঘাটের টার্মিনালেই নিশিযাপনে বাধ্য হচ্ছেন।
পদ্মা নদীতে স্রোতের তীব্রতা এ সময়ে থাকে না। কুয়াশা কিংবা নাব্য সঙ্কটও দেখা যায় না বছরের বর্তমান দিনগুলোতে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপর্যয় না থাকলেও ফেরির সংখ্যাল্পতা রয়ে গেছে যা মানুষের চোখে, মানবসৃষ্ট কৃত্রিম সঙ্কট বৈ কিছু নয়। এ দিকে জনগণের- যাত্রী, চালক ও পণ্য ব্যবহারকারী, তথা ব্যবসায়ীদের ব্যাপক অসুবিধা অব্যাহত রয়েছে। আরো অভিযোগ, এই ঘাটে যাত্রীদের কোনো গুরুত্ব বা মর্যাদা দেয়া হয় না কর্তৃপক্ষের তরফে। আত্মমর্যাদা হারিয়ে সবাই পদ্মা সেতু কবে চালু হচ্ছে, এর জন্য প্রতীক্ষারত।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) জানায়, এখানে চলছে পাঁচটি ফেরি। গত বর্ষায় তীব্র স্রোতে পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা খেয়ে ফেরির ক্ষতি হলে এই সঙ্কটের সূচনা। তাই ছোট পাঁচটি ফেরি দিয়ে রোগী বহনের জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট যান ও যাত্রীরা পারাপার হচ্ছেন কোনোমতে। পরিবহন সমস্যা ও যাত্রীদের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেলেও এ রুটে ফেরি বাড়ছে না। গত বছর জুলাই-আগস্টে পদ্মায় স্রোতের তীব্রতা থাকায় নির্মীয়মাণ সেতুর তিনটি পিলারে চারবার ফেরির ধাক্কা লাগে। ফলে কয়েকজন আহত হন এবং মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর পাইলক্যাপের ক্ষতি হয়েছিল। তাই সর্বপ্রকার দুর্ঘটনা এড়াতে ১৮ আগস্ট দুপুর থেকে এ রুটে ফেরি চলাচলই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কয়েকবার সীমিতভাবে ফেরি চলে; আবার বন্ধ হয়ে যায়। এ দিকে ফেরিঘাট স্থানান্তরও হলো মাদারীপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝিকান্দি নামক জায়গায়। কয়েক স্থানে ডুবোচরের দরুন ফেরি স্বাভাবিকভাবে চলতে পারেনি সেই বিকল্প রুটেও। অবশেষে দীর্ঘ ৮০ দিন পর ছোট ছোট মাত্র পাঁচটি ফেরি দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স, অন্যান্য যান ও যাত্রী পারাপার শুরু হয়।
এ রুটের একজন মাইক্রোচালক বলেছেন, ‘ফেরি বাড়লে মানুষের ভোগান্তি কমবে’। একজন ট্রাকচালকের কথা, ‘বাংলাবাজার ঘাটে এসে কয়েক ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। সিরিয়াল পেতে দিন কেটে যায়। এই ঘাটে এভাবে শত শত কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মানুষের। কিন্তু তাদের কষ্ট দেখবে কে? স্বাভাবিক সময়েও ফেরি না বাড়া মানে, তামাশা করা।’ বিআইডব্লিউটিসির কথা হচ্ছে, ‘ফেরি চলছে স্বাভাবিকভাবেই। রাতে ফেরি বন্ধ থাকে বলে ঘাটে যানবাহনের চাপ। এখনো ফেরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তাই ফেরি বাড়েনি।’
অবিলম্বে ফেরি বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ লাঘবের ব্যবস্থা করা উচিত বলে আমরা মনে করি। অন্যথায় সদাব্যস্ত এ রুটে জনদুর্ভোগ আরো বাড়বে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement