২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরোদমে ক্লাস শুরু কাল

ক্ষতি পোষাতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চাই

-

আগামীকাল ১৫ মার্চ মঙ্গলবার দেশের একটি বিশেষ দিন। বিপর্যয়কর মহামারীর পর এ দিন ফের পুরোপুরি খুলতে যাচ্ছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সশরীরে পুরোদমে ক্ল¬াস শুরু হবে এ দিন। এ খবরে স্বস্তিবোধ করছেন অভিভাবকরা। কিন্তু গতকাল রোববার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নোটিশ দেয়া হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেছেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পাঠদান করা হবে। এ সংক্ষিপ্ত আকারে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা হবে। তাই পরীক্ষার চাপ থাকবে না।
পুরো দুই বছর প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা হয়তো কখনোই পুষিয়ে নেয়া যাবে না। কারণ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তেমন কোনো প্রস্তুতি আছে বলে মনে হয় না। বরং সিলেবাস সঙ্কুচিত করে, পরীক্ষার চাপ কমিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা অর্জনের বিষয়টিকে ‘আনন্দময়’ করতে চায় সরকার। আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান এখন এক জনপ্রিয় শিক্ষাপদ্ধতি। তবে সেটি কোন পর্যায়ে, কিভাবে প্রযোজ্য, বোধগম্য কারণেই সেসব নিয়ে বিতর্ক তোলা অর্থহীন। মহামারীর কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ডের অধিকারী বাংলাদেশে সেসব বিবেচনার জন্য কেউ বসে নেই। আমরা তাই স্বাগত জানাই, এই বিশেষ দিনটিকে। ইতিহাসের পাতায় দিনটি নিশ্চয়ই লেখা থাকবে। কিন্তু লেখা থাকবে না মহামারীর কারণে ঝরে পড়া বা অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লাখো শিক্ষার্থীর যন্ত্রণার কথা। দুই বছর ঘরে বসে থেকে অনেক শিশুই পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়েছে। স্কুলে ক্লাস শুরু হলে হয়তো তাদের মনোযোগ ফিরে আসবে।
মহামারীর কারণে বাংলাদেশের অন্তত ৪০ লাখ শিশুর প্রথমবার স্কুলে ভর্তির সময় দু’বছর পিছিয়ে গেল। আর বছরদেড়েক আগে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষার স্তর পর্যন্ত বাংলাদেশে চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির মধ্যে রয়েছেÑ পড়াশোনার ক্ষতি; মানসিক দুর্দশা, স্কুলের খাবার না পাওয়া, বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া এবং শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়া। দু’বছরে কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে এবং কত মেয়ে শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে তারও যথাযথ হিসাব কোথাও নেই। যারা টিকে আছে তাদের লেখাপড়ার যে ক্ষতি হলো সে হিসাবও কেউ করবে না। করোনাকালে অনলাইন ও টেলিভিশনে শিক্ষাকার্যক্রম সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে সেটি ঠিক; কিন্তু সে সুযোগ সমানভাবে নিতে পারেনি দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী। সুতরাং লেখাপড়ার ক্ষতি হয়েছে বিপুল। স্বল্প প্রস্তুতি নিয়ে বা একেবারেই প্রস্তুতিহীন এই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে ঢুকবে। তাতে তার নিজের জীবন যেমন অসম্পূর্ণ হয়ে থাকবে তেমনই তার কাছ থেকে দেশ বা জাতিরও প্রাপ্তি হবে খুঁতযুক্ত বা ত্রুটিপূর্ণ। স্কুল বন্ধ থাকায় ২০২০ সালের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ২৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে অটো পাস দিয়ে পরের শ্রেণীতে ওঠার অনুমতি দেয়া হয়। তার অর্থ হলো, এই ২৯ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের ভিত্তিটাই চিরতরে নড়বড়ে রয়ে গেল।
অভিভাবক ঐক্য ফোরাম দুই বছরে পড়ালেখায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য একটি পথরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে সরকারের কাছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরাও মনে করি ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকা দরকার।

 


আরো সংবাদ



premium cement